ইস্টবেঙ্গলে ডামাডোল অব্যাহত। ইনভেস্টর শ্রী সিমেন্টের সঙ্গে লাল-হলুদের সাবেক কর্তাদের চুক্তিবিতর্ক মেটার কোনও লক্ষণ আপাতত দেখা যাচ্ছে না। এর জেরে নতুন মরসুমের টিমগঠনও স্থগিত। অথচ গত ৯ই জুন থেকে শুরু হয়ে গেছে আন্তঃরাজ্য দলবদল। কিন্তু ইস্টবেঙ্গলে সেসব এখন বিশবাঁও জলে। এই মরসুমে আদৌও আইএসএল খেলা সম্ভব কিনা, সে নিয়েই রয়েছে অনিশ্চয়তার কালো মেঘ। সূত্রের খবর, দিনকয়েকের মধ্যেই হয়তো শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ চুক্তির ব্যাপারে অচলাবস্থার কথা সরকারীভাবে এফএসডিএল-কে জানিয়ে দিতে পারেন। সেক্ষেত্রে এফএসডিএলের কাছে রাস্তা থাকবে ইস্টবেঙ্গলের পরিবর্তে বিকল্প দলের সন্ধান করার।
শ্রী সিমেন্ট-ইস্টবেঙ্গল চুক্তি যদি শেষ পর্যন্ত ভেস্তেই যায়, সেক্ষেত্রে শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ একইসঙ্গে এই বিষয়টি মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের অফিসেও জানিয়ে দেবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে শেষ পর্যন্ত চুক্তি সই না হলে কোনওরকম ক্ষতিপূরণ দাবী না করেই কি বিনাশর্তে স্পোর্টিং রাইটস ফিরিয়ে দেবেন কি হরিমোহন বাঙুররা – সে বিষয়ে অনেকেই সন্দিহান।
গোদের উপর বিষফোঁড়ার মতো বেতন বিতর্ক নিয়েও জর্জরিত ইস্টবেঙ্গলের সাবেক কর্তারা। কোলাডো-নোডাররা আগেই গিয়েছিলেন ফিফায়, গত সপ্তাহে জনি অ্যাকোস্টার তরফ থেকেও বকেয়া বেতন সংক্রান্ত ফিফার চিঠি এসে পৌঁছোয় ইস্টবেঙ্গলের কর্তাদের কাছে। শোনা যাচ্ছে, একই পথ অনুসরণ করতে পারেন কাশিম আইদারাও। এদিকে চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে সই না হওয়ায় এবং বিচ্ছেদের আশঙ্কা যখন তুঙ্গে, তখন এসবের কোনও দায়ভারই এখনও পর্যন্ত নিতে রাজী নন শ্রী সিমেন্ট কর্তৃপক্ষ।
প্রতিদিনের এই ডামাডোলে যারপরনাই ক্ষুব্ধ সমর্থকদের এক বড় অংশ। লকডাউনের আবহে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে চলা অচলাবস্থার বিরুদ্ধে, বা বলা ভালো সাবেক কর্তাদের বিরুদ্ধে এতদিন নিজেদের ক্ষোভ সোশ্যাল মিডিয়াতেই উগরে দিচ্ছিলেন সমর্থকরা। কিন্তু অনেক সমর্থকেরই ধৈর্য্যের বাঁধ বোধহয় এবার ভাঙতে শুরু করেছে।
রাজ্যে আংশিক বিধিনিষেধ এখনও পুরোপুরি না উঠলেও আর বসে থাকতে পারলেন না সমর্থকদের একাংশ। সরাসরি পথে নামলেন তাঁরা। রবিবার দুপুর নাগাদ কিছু সংখ্যক সমর্থক শহরের রাস্তায় বিক্ষোভ দেখালেন ইস্টবেঙ্গলের সাবেক কর্তাদের বিরুদ্ধে। বিক্ষোভের মূল তীর ইস্টবেঙ্গলের কার্যকরী সমিতির সদস্য দেবব্রত সরকার, ওরফে নীতু সরকারের দিকেই, যাঁকে বঙ্গ মিডিয়ার একাংশ “ইস্টবেঙ্গলের শীর্ষকর্তা” তকমায় অভিহিত করেন।
বিক্ষোভকারীদের হাতের পোস্টারে লেখা ছিল “অপদার্থ ক্লাব অফিসিয়াল নিপাত যাক, সরকার রাজ নিপাত যাক”। আরেকটি পোস্টারের বক্তব্য “ক্লাব অফিসিয়ালদের ক্লাব পরিচালনায় স্বেচ্ছাচারিতা বন্ধ করতে হবে”। তৃতীয় একটি পোস্টারে লেখা বর্তমানে সোশ্যাল মিডিয়ায় এক বিরাট অংশের ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের দ্বারা ব্যবহৃত হ্যাশট্যাগ – “Sign or Resign”।
এরপরেই উঠতে থাকে একের পর এক স্লোগান। “দীর্ঘদিন ধরে চুক্তিপত্র সই নিয়ে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবের টালবাহানা মানছি না, মানবো না”, “অপদার্থ নীতু সরকার নিপাত যাক”, “মুখ্যমন্ত্রীর সম্মানার্থে চূড়ান্ত চুক্তিপত্রে ইস্টবেঙ্গল ক্লাবকে সাইন করতে হবে”, “সরকাররাজ নিপাত যাক”, “ইস্টবেঙ্গল ক্লাবে নীতু সরকারের ঘুঘুর বাসা ভাঙছি, ভাঙবো”, “আইএসএল খেলতে হবে”, “ইস্টবেঙ্গল কর্তারা জেনে রাখো আন্দোলন এই জায়গাতেই সীমিত থাকছে না, থাকবে না” – ইত্যাদি নানাবিধ স্লোগান দিতে থাকেন বিক্ষোভকারী ইস্টবেঙ্গল সমর্থকরা।
এখানেই ক্ষান্ত হননি তাঁরা। এরপরেই শহরের রাস্তায় নীতু সরকারের ছবি সম্বলিত কুশপুতুল দাহ করেন বিক্ষোভকারীরা।
সবমিলিয়ে ইস্টবেঙ্গলের সাবেক কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে ক্রমেই পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে উঠছে।