ম্যানুয়েল লোকাতেলি-র জোড়া গোলের সুবাদে সুইজারল্যান্ডকে ৩-০ গোলে দুরমুশ করে এক রাউন্ড বাকি থাকতেই ইউরো ২০২০-র প্রথম দল হিসেবে শেষ ষোলোয় পৌঁছে গেল ইতালি। ইউরোয় এর আগে দুই দলের মুখোমুখি সাক্ষাৎকার হয়েছিল ৬ বার। একবারও জয়ের মুখ দেখেনি সুইজারল্যান্ড (Switzerland national football team)। তিনটে ম্যাচ ড্র হয়, বাকি তিনবার জেতে ইতালি। বুধবারও রোমের স্তাদিও অলিম্পিকো (Stadio Olimpico) স্টেডিয়ামে তার অন্যথা হলো না। জয় অধরাই রইলো সুইসদের। তবে দুই দলেরই শুরুটা হলো বেশ গতিময়, ফলে দর্শকদের জন্যও ম্যাচটা বেশ উপভোগ্য হলো।
ম্যাচের শুরু থেকেই রাশ ছিল ইতালির (Italy national football team) হাতে। ১৯ মিনিটের মাথায় লোরেঞ্জো ইনসিগনে-র (Lorenzo Insigne) ইনসুইং কর্নার সুইজারল্যান্ডের বক্সে জটলার মধ্যে এসে পড়লে ইতালির অধিনায়ক কিয়েলিনি (Giorgio Chiellini) ছিটকে আসা লুজ বল গজ চারেকের দূরত্বে সুইজারল্যান্ডের গোলে ঠেলে দেন। কিন্তু ভার রিপ্লে-তে দেখা যায়, বল তাঁর হাতে লেগেছিল। ফলে হ্যান্ডবলের কারণে বাতিল হয় গোলটি।
ইতালি জিতলেও দিনটা ভালো গেলো না কিয়েলিনির। প্রথমে গোল বাতিল, তারপর ম্যাচের ২৪ মিনিটে হ্যামস্ট্রিংয়ে চোট পেয়ে মাঠ ছাড়তে হলো তাঁকে। পরিবর্তে ম্যাচের বাকি সময়টা ডিফেন্সে খেললেন ফ্রান্সেসকো অ্যাকারবি (Francesco Acerbi)।
তবে চাপ রেখে প্রথম গোলটা তুলে নিতে বেশিক্ষণ অপেক্ষা করতে হয়নি আজুরি-দের (Azzurri)। ম্যাচের ২৬ মিনিটে গোলমুখ খোলেন ম্যানুয়েল লোকাতেলি (Manuel Locatelli)। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে লোকাতেলি ডানদিকের উইংয়ে বল বাড়ান ডোমেনিকো বেরারদি-কে (Domenico Berardi)। লম্বা দৌড়ে বক্সের মধ্যে ঢুকে গতিতে সুইস ডিফেন্ডারকে বিট করে ছয় গজ বক্সের মধ্যে যে মাইনাস রাখলেন তিনি, সেখান থেকে গোল করতে ভুল করেননি ম্যানুয়েল লোকাতেলি (১-০)।
এরপরেও দ্বিতীয় গোলের জন্য চাপ বজায় রাখে ইতালি। ম্যাচের ৩৪ ও ৩৭ মিনিটে পরপর দুটো সুযোগ আসে। কিন্তু প্রথম ক্ষেত্রে ইনসিগনের বাঁকানো শট প্রায় গোলমুখ থেকে হেডে ক্লিয়ার করেন আকাঞ্জি (Manuel Akanji), দ্বিতীয় ক্ষেত্রে সুইস ডিফেন্সের একটা লুজ বল ধরে ইনসিগনে (Lorenzo Insigne) বল বাড়ান স্পিনাজ্জোলা-কে (Leonardo Spinazzola)। বক্সের ডানদিক থেকে স্পিনাজ্জোলার হালকা টোকা অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আবারও গোল তুলে নেয় ইতালি। সৌজন্যে আবারও সেই লোকাতেলি। ম্যাচের ৫২ মিনিটে মাথায় সুইস ডি বক্সের ঠিক মাথায় লোকাতেলির জন্য বল সাজিয়ে দেন বারেলা (Nicolò Barella)। গড়ানো শটে সুইজারল্যান্ডের জালের ডানদিকে বল জড়াতে ভুল করেননি ২৩ বছর বয়সী এই তরুণ মিডফিল্ডার (২-০)।
গোটা ম্যাচে একটাই উল্লেখযোগ্য গোলের সুযোগ এসেছিলো সুইজারল্যান্ডের কাছে। ম্যাচের ৬৪ মিনিটে জুবের-এর শট পা দিয়ে বাঁচিয়ে দেন ইতালির গোলকিপার জিয়ানলুইগি ডোনারুমা (Gianluigi Donnarumma)।
ম্যাচের একেবারে অন্তিমলগ্নে ৮৮ মিনিটে নিজেদের মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে চকিত টার্নে ঘুরে দূরপাল্লার শটে গোলকিপারকে পরাস্ত করে ইতালির জয় নিশ্চিত করেন সিরো ইমমোবাইল (Ciro Immobile)।
এই মুহূর্তে আগুনে ফর্মে রয়েছে ইতালি। টানা ২৯টা ম্যাচ অপরাজিত নীল জার্সিরা। গত ১০ ম্যাচে একটাও গোল হজম করেনি ইতালির ডিফেন্স। বিশেষজ্ঞরা এখনই “ডার্ক হর্স” বলে অভিহিত করছেন রবার্তো মানচিনি-র প্রশিক্ষণাধীন (Roberto Mancini) দলকে। ইতালির বর্তমান পারফরম্যান্স যে নকআউটের দলগুলোর কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলতে বাধ্য, তা বলাই বাহুল্য।