একবছরেরও বেশী সময়ের জন্য স্থগিত থাকার পর দর্শকপূর্ণ স্টেডিয়ামেই এক বর্ণময় উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে শেষমেশ শুরু হলো ইউরো ২০২০।
ইতালির রাজধানী রোমের ঐতিহাসিক স্তাদিও অলিম্পিকো (Stadio Olimpico) স্টেডিয়ামে আয়োজিত হলো ইউরো ২০২০-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান, যা চলবে আগামী একমাস ধরে।
ষোড়শ ইউরো কাপের দুটি সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে টুর্নামেন্টের সবচেয়ে বড় স্টেডিয়াম – ইংল্যান্ডের ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে (Wembley Stadium)। ইউরো ২০২০-র উদ্বোধনী ম্যাচে তুরস্ককে ৩-০ গোলে হারিয়ে দিয়ে টুর্নামেন্টটা ভালোভাবেই শুরু করলো ইতালি।
ইউরোপের বর্তমান কোভিড বিধি মেনে আংশিক দর্শকাসনপূর্ণ স্টেডিয়ামে শুক্রবার এক অন্যন্য সন্ধ্যার সাক্ষী হয়ে রইলেন ফুটবল অনুরাগীরা। আয়োজনে, আড়ম্বরে পূর্ববর্তী যে কোনও বড় ক্রীড়ানুষ্ঠানকেই টক্কর দিতে পারে ইউরো ২০২০-র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানের সূচনা করেন ইতালির দুই কিংবদন্তী ফুটবলার ফ্রান্সেসকো তোত্তি (Francesco Totti) এবং আলেসান্দ্রো নেস্তা (Alessandro Nesta)। এরপর আয়োজিত হয় এক ট্র্যাডিশনাল অনুষ্ঠান এবং একটি ছোট্ট অর্কেস্ট্রা।
এরপর পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ ক্লাসিকাল টেনর অপেরা গায়ক আন্দ্রেয়া বচেলি-র (Andrea Bocelli) গাওয়া অপেরা গান “নেসান দোরমা” (Nessun Dorma) অনুষ্ঠানকে এক অন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়। স্টেডিয়ামে বসে থাকা প্রায় ১৮,০০০ দর্শক তখন তাড়িয়ে তাড়িয়ে উপভোগ করছেন সঙ্গীতজগতের এই জীবন্ত কিংবদন্তীকে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের মূল আকর্ষণ ছিলেন বহুল প্রচলিত “Animals”-খ্যাত ডাচ ডিজে মার্টিন গ্যারিক্স (Martin Garrix); সাথে আইরিশ গায়ক বোনো (Bono) এবং বিখ্যাত রক ব্যান্ড U2-র দ্য এজ (The Edge)। তাঁদের নিজস্ব কম্পোজিশন ইউরো কাপ ২০২০-র অফিশিয়াল থিম সং “উই আর দ্য পিপল” (We Are The People [UEFA EURO 2020 Song]) গানে সারা বিশ্বের অসংখ্য অনুরাগীদের মাতিয়ে দেন তাঁরা।
এই প্রথমবার কোনও বড় ফুটবল প্রতিযোগিতার উদ্বোধনী অনুষ্ঠান আয়োজিত হলো ভার্চুয়ালি (Virtually)।
তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে নজর কাড়লো দুটি বিষয় –
১. অর্কেস্ট্রা চলাকালীন মাঠে প্রতিটি দেশের পতাকার রঙে রাঙানো ঢাউস সাইজের ফুটবলাকৃতি বেলুন নিয়ে আয়োজিত বর্ণাঢ্য অনুষ্ঠান, যেখানে ড্রাম বাদ্যরত অবস্থাতেই ড্রামবাদকরা কেবলমাত্র কোমরে বাঁধা দড়ির সাহায্যে স্টেডিয়ামের ছাদের উচ্চতায় উঠে ঐরকম ঝুলন্ত অবস্থাতেই নিজেদের বাদ্যসঙ্গীত পরিবেশন করলেন।
২. আন্দ্রেয়া বচেলি-র সংগীত উপস্থাপনার সময় সন্ধ্যে নেমে আসা রোমের আকাশে হাজারো আতসবাজির ঝলকানি। লাল-হলুদ-নীল-গোলাপি-গেরুয়া-সবুজ – হরেক রকমের রঙের বিচ্ছুরণে রোমের আকাশ যেন তখন এক মোহময়ী ক্যানভাস, যেখানে শিল্পী তাঁর আপন খেয়ালে তুলির আঁচড়ে একের পর এক অভূতপূর্ব মুহূর্তের সৃষ্টি করে চলেছেন।
আগামী একমাস বাকু থেকে লন্ডন, সেন্ট পিটার্সবার্গ থেকে সেভিয়া – ইউরোপের ১১টি ভিন্ন দেশের ১১টি শহরে আয়োজিত হবে এবারের ইউরো। অর্থাৎ, আগামী একমাস ফুটবল-পাগল বাঙালির রাত জাগার পালা।