ঢাকেশ্বরী ঢাকা

ঢাকা EBRP

Share

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp

[fblike]

ঢাকার নামকরণের সঠিক ইতিহাস নিয়ে ব্যাপক মতভেদ রয়েছে। কথিত আছে যে, সেন বংশের রাজা বল্লাল সেন বুড়িগঙ্গা নদীর তীরবর্তী এলাকায় ভ্রমণকালে সন্নিহিত জঙ্গলে হিন্দু দেবী দুর্গার একটি বিগ্রহ খুঁজে পান। দেবী দুর্গার প্রতি শ্রদ্ধাস্বরূপ রাজা বল্লাল সেন ঐ এলাকায় একটি মন্দির প্রতিষ্ঠা করেন। যেহেতু দেবীর বিগ্রহ ঢাকা বা গুপ্ত অবস্থায় খুঁজে পাওয়া গিয়েছিলো, তাই রাজা, মন্দিরের নাম রাখেন ঢাকেশ্বরী মন্দির। মন্দিরের নাম থেকেই কালক্রমে স্থানটির নাম ঢাকা হিসেবে গড়ে ওঠে। একসময় এ অঞ্চলে প্রচুর ঢাক গাছ (বুটি ফুডোসা) ছিল, তার থেকে ঢাকা নাম এসেছে বলে অনেকে মনে করেন। ‘ঢাকাভাষা’ নামে একটি প্রাকৃত ভাষা এখানে প্রচলিত ছিল। রাজতরঙ্গিণী-তে ঢাক্কা শব্দটি ‘পর্যবেক্ষণ কেন্দ্র’ হিসেবে উল্লেখিত হয়েছে। এলাহাবাদ শিলালিপিতে উল্লেখিত সমুদ্রগুপ্তের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য ডবাকই হলো ঢাকা। আবার অনেক ঐতিহাসিকের মতে, মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীর যখন ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী হিসেবে ঘোষণা করেন; তখন সুবাদার ইসলাম খান আনন্দের বহিঃপ্রকাশস্বরূপ শহরে ‘ঢাক’ বাজানোর নির্দেশ দেন। এই ঢাক বাজানোর কাহিনী লোকমুখে কিংবদন্তির রূপ নেয় এবং তা থেকেই শহরের নাম ঢাকা হয়ে যায়।

বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত ঢাকা আয়তন ও জনসংখ্যার- উভয় দিক দিয়েই বাংলাদেশের বৃহত্তম শহর। ধারণা করা হয় কালের পরিক্রমায় ঢাকা প্রথমে সমতট, পরে বঙ্গ ও গৌড় প্রভৃতি রাজ্যের অন্তর্ভুক্ত ছিলো। খ্রিস্টীয় ১৩শ শতাব্দীর শেষের দিকে মুসলমানেরা ঢাকা অধিকার করে। মোঘল সম্রাট জাহাঙ্গীরের ফরমান অনুযায়ী ১৬ জুলাই ১৬১০ খ্রিস্টাব্দে ঢাকাকে সুবা বাংলার রাজধানী ঘোষণা করা হয়। সম্রাট জাহাঙ্গীর-এর নাম অনুসারে রাজধানীর নাম জাহাঙ্গীরনগর রাখা হয়। ১৬৫০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার শাহ সুজা রাজধানী আবার রাজমহলে স্থানান্তর করেছিলেন। শাহ সুজা’র পতনের পর ১৬৬০ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার মীর জুমলা আবার রাজধানী ঢাকায় স্থানান্তর করেন। এরপর বেশ কিছুকাল ঢাকা নির্বিঘ্নে রাজধানীর মর্যাদা ভোগ করার পর ১৭১৭ খ্রিস্টাব্দে সুবেদার মুর্শিদ কুলি খান রাজধানী মুর্শিদাবাদে স্থানান্তর করেন। বঙ্গভঙ্গের পর ১৯০৫ সালে ঢাকাকে আসামও বাংলার রাজধানী করা হয়। ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসনের অবসান এবং স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর পূর্ব বাংলা নামে নতুন প্রদেশের রাজধানী হওয়ায় ঢাকার উথানে অধিকতর স্থায়ী উন্নয়ন সাধিত হয়। এ সময় হতে ঢাকা শুধু এ নতুন প্রদেশের প্রশাসনিক সদর দফতরই ছিল না বরং এখানে আইন পরিষদ এবং জাতীয় সংসদের অধিবেশন বসত। অনেক সংগ্রাম, ত্যাগ এবং রক্তের বিনিময়ে নয়মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশ চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্রের রাজধানী হিসেবে ঢাকা রাজনৈতিক , প্রশাসনিক কার্যকলাপ এবং অর্থনৈতিক, সামাজিক, শিক্ষা ও সাংস্কৃতিক কার্যক্রমের সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্ররূপে মর্যাদা লাভ করে।

বাংলাদেশের ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম অধ্যায় হলো একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। এই মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়ে জন্মলাভ করে স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশ। পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর থেকে পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি জানিয়ে আসছিলো। পাকিস্তান সরকার এ যৌক্তিক দাবির সম্পূর্ণ বিরোধিতা করে ১৯৪৮ সালেই উর্দুকে একমাত্র সরকারি ভাষা হিসেবে ঘোষণা করে। এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ক্রমবর্ধমান প্রতিবাদ চলতে থাকে যা পরবর্তীতে ভাষা আন্দোলন নামে পরিচিতি লাভ করে। এ আন্দোলন পুনরুজ্জীবিত হয় ১৯৫২ সালে এবং সেই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি ভাষার দাবিতে ঢাকা বিশববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ছাত্ররা একত্রিত হয়। পুলিশ এ জনসমাবেশের উপর গুলি চালানোর ফলে রফিক, সালাম, বরকত, জববারসহ আরো অনেকে শহীদ হয়। এই ঘটনা আন্দোলনকে এক নতুন মাত্রা দান করে এবং রাজনৈতিক গুরুত্ব বহুমাত্রায় বাড়িয়ে দেয়। ১৯৫৮ সালে জেনারেল আইয়ুব খান সামরিক শাসন জারি করে ক্ষমতা দখল করে। ১৯৬৬ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙ্গালীর স্বায়ত্বশাসন প্রতিষ্ঠা করার লক্ষে ছয় দফা দাবি পেশ করেন। ছয় দফা ম্যান্ডেট নিয়ে পাকিস্তানে ১৯৭০ সালের ৭ ডিসেম্বর সর্বপ্রথম অনুষ্ঠিত সাধারণ নির্বাচনে পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক দল একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে জয়লাভ করে আওয়ামী লীগ। পাকিস্তানের শাসকবর্গ-কিছু রাজনৈতিক নেতা এবং কিছু সামরিক কর্মকর্তা-ষড়যন্ত্রের গ্রন্থিগুলো এমনভাবে বিন্যস্ত করেন যেন শাসন ক্ষমতা কোনক্রমে বাঙ্গালীর হস্তগত না হয়। বঙ্গবন্ধু ১লা মার্চ ১৯৭১ দেশব্যাপী অসহযোগের আহবান জানান। ৭ই মার্চ ১৯৭১ বঙ্গবন্ধু রহমান রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমানে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) সমগ্র বাঙালি জাতিকে এক দিকনির্দেশনী ভাষণে সর্বপ্রকার পরিস্থিতি মোকাবেলার জন্য প্রস্ত্তত হতে আহবান জানান। এই ভাষণে তিনি বলেন, ”আমি যদি হুকুম দেবার নাও পারি, তোমাদের কাছে আমার অনুরোধ রইল, ঘরে ঘরে দূর্গ গড়ে তোল। ……… এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম।” বঙ্গবন্ধুর এই ভাষণ পৃথিবীতে উল্লেখযোগ্য নেতৃবৃন্দের ভাষণগুলির মধ্যে অন্যতম একটি হিসাবে বিবেচিত।

২৩শে মার্চ পূর্ব বাংলার প্রতিটি শহরে পাকিস্তান দিবসের অনুষ্ঠান বর্জিত হয় এবং পাকিস্তানের পতাকার পরিবর্তে বাংলাদেশের পতাকা উড়তে দেখা যায়। ২৫ মার্চ রাত প্রায় সাড়ে এগারোটার দিকে পাকিস্তানি বাহিনী তাদের হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। সেনাবাহিনীর হাতে বঙ্গবন্ধু রাত ১২টা ৩০ মিনিটে ধানমন্ডি বাসভবন থেকে বন্দী হবার পূর্বে তিনি দলীয় নেতৃবন্দেকে করণীয় বিষয়ে যথাযথ নির্দেশ দিয়ে অবস্থান পরিবর্তনের কথা বলেন। একই সাথে তিনি বাংলাদেশকে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসাবে ঘোষণা করেন। বঙ্গবন্ধুর এই ঘোষণা বিভিন্ন মাধ্যমে প্রচারিত হয়। পাকিস্তানিদের অপারেশনের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য ঢাকা বিশববিদ্যালয়ের সার্জেন্ট জহুরুল হক হল এবং জগন্নাথ হলের ছাত্রদের নির্বিচারে হত্যা করা হয়। ঢাকা বিশববিদ্যালয় ও আশেপাশের বহু সংখ্যক শিক্ষক ও সাধারণ কর্মচারিদেরও হত্যা করা হয়। পুরোনো ঢাকার হিন্দু সম্প্রদায় অধ্যুষিত এলাকাগুলোতেও চালানো হয় ব্যাপক গণহত্যা। রাজারবাগ পুলিশ লাইনে আক্রমণ করে হত্যা করা হয় পুলিশ বাহিনীর বহু সদস্যকে। পিলখানার ইপিআর-এর কেন্দ্রে আচমকা আক্রমণ চালিয়ে নির্বিচারে হত্যা করা হয় নিরস্ত্র সদস্যদের। কয়েকটি পত্রিকা অফিস ভস্মীভূত করা হয়। দেশময় ত্রাস সৃষ্টির লক্ষ্যে নির্বিচারে হত্যা করা হয় বিভিন্ন এলাকায় ঘুমন্ত নর-নারীকে। হত্যা করা হয় শিশু ও বয়স্ক ব্যক্তিদেরও। ধারণা করা হয়, সেই রাত্রিতে একমাত্র ঢাকা ও তার আশে পাশের এলাকাতে প্রায় এক লক্ষ নিরীহ নর-নারীর জীবনাবসান ঘটে। ২৬ মার্চ চট্টগ্রাম বেতার কেন্দ্র থেকে বঙ্গবন্ধুর ঘোষণাকে অবলম্বন করে চট্টগ্রাম আওয়ামী লীগ নেতা এম. এ হান্নান স্বাধীনতার ঘোষণা পাঠ করেন। ২৭ মার্চ অপরাহ্নে চট্টগ্রামের কালুরঘাট বেতার কেন্দ্র থেকে ৮ম ইস্টবেঙ্গল রেজিমেন্টের মেজর জিয়াউর রহমান বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের পক্ষে স্বাধীনতার আরেকটি ঘোষণা পাঠ করেন। এই ঘোষণাটিতে তিনি উল্লেখ করেন যে, বাংলাদেশে শেখ মুজিবর রহমানের নেতৃত্বে একটি স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র গঠিত হয়েছে।

অক্টোবর ‘৭১ মাসের মধ্যে পাকিস্তান সেনাবাহিনী মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে বিপর্যস্ত হয়ে সমস্ত সীমান্ত এলাকা ছেড়ে দিয়ে সেনানিবাস অথবা বড় বড় শহর ভিত্তিক অবস্থান নিতে বাধ্য হয়। এই সময়ের মধ্যে মুক্তিবাহিনী বাংলাদেশের প্রায় ৮০ ভাগ এলাকা মুক্ত করেছিল। নভেম্বর ‘৭১ এর প্রথম দিকে মুক্তিবাহিনী ও ভারতীয় মিত্র বাহিনীর সমন্বয়ে গঠিত হয় সম্মিলিত বাহিনী। ৩রা ডিসেম্বর ‘৭১ পাকিস্তান অতর্কিতভাবে ভারত আক্রমণ করলে যুদ্ধের মোড় পরিবর্তিত হয়। ৬ই ডিসেম্বর ‘৭১ ভারত স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিলে মুক্তিবাহিনীর মনোবল বহুলাংশে বৃদ্ধি পায়। এই পর্যায়ে সমন্বিত এক যুদ্ধ পরিকল্পনায় সম্মিলিত বাহিনী প্রচন্ড বেগে অগ্রসর হয়ে পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পর্যুদস্ত করে। এই চূড়ান্ত যুদ্ধে ভারতীয় ইষ্টার্ণ কমান্ড অংশ গ্রহণ করে। তাদের সদর দপ্তর ছিল কলকাতাস্থ ফোর্ট উইলিয়ামে এবং অধিনায়ক ছিলেন লেঃ জেনারেল জগজিত সিং অরোরা। ১৬ই ডিসেম্বর ‘৭১ বিকাল ৪টা ৩০ মিনিটে ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে (বর্তমান সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ৯৩ হাজার সৈন্য বিনা শর্তে সম্মিলিত বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করে। এই আত্মসমর্পণ দলিলে স্বাক্ষর করেন পূর্বাঞ্চলের সম্মিলিত বাহিনী প্রধান লেঃ জেনারেল জগজিত সিং অরোরা ও পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় অধিনায়ক লেঃ জেঃ এ কে নিয়াজী। ১৬ ডিসেম্বর ‘৭১ বাংলাদেশ শত্রুমুক্ত হয়। প্রতি বছর এই দিনটি ”বিজয় দিবস” হিসাবে পালিত হয়।

কেন্দ্রিয় শহীদ মিনার ১৯৫২ খ্রিস্টাব্দের ভাষা আন্দোলনের স্মৃতিসৌধ। এটি বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার কেন্দ্রস্থলে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের বর্হিপ্রাঙ্গনে অবস্থিত। প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারি তারিখে এখানে হাজার হাজার মানুষ উপস্থিত হয়ে ভাষা আন্দোলনের শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধার্ঘ্য নিবেদন করে। প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশের সবচেয়ে পুরোনো বিশ্ববিদ্যালয়। রাজধানী ঢাকা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত এ বিশ্ববিদ্যালয় জন্মলগ্ন থেকে শিক্ষা, গবেষণা ও জাতীয়ভাবে অবদানের ক্ষেত্রে নিজের অবস্থান প্রথম স্থানেই ধরে রেখেছে। ধানমন্ডি এলাকায় একসময় হাট বসতো, যা বিখ্যাত ছিল ধান ও অন্যান্য শস্য বিক্রয়ের জন্য। স্বাধীন বাংলাদেশের স্থপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ধানমন্ডি ৩২ নম্বরের যে বাড়িতে জীবনের গুরুত্বপূর্ণ সময় কাটিয়েছেন, স্বাধিকারের সংগ্রামে জাতিকে দিক নির্দেশনা দিয়েছেন, সে বাড়িটি আজ তাঁর নানা স্মৃতিচিহ্ন বহন করছে। বর্তমানে এটি বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর। লালবাগ কেল্লা, মোঘল আমলের বাংলাদেশের একমাত্র ঐতিহাসিক নিদর্শন যাতে একই সাথে ব্যবহার করা হয়েছে কষ্টি পাথর, মার্বেল পাথর আর নানান রঙবেরঙের টালি। লালবাগ কেল্লার নির্মাণ কাজ শুরু হয় ১৬৭৮ সালে। একদম শুরুর দিকে এই কেল্লার নাম ছিল “কেল্লা আওরঙ্গবাদ”। লালবাগ কেল্লা থেকে ৩০০ মিটার উত্তরপুবে ঢাকেশ্বরী মন্দিরের অবস্থান। প্রবাদ, সতী দেহ ছিন্ন হবার পর এই স্থানে তার কিরীটের ডাক এই জায়গায় পড়ে তাই এটা উপ-পীঠ। ডাক হল উজ্জ্বল গহনার অংশ। ডাক থেকেই ঢাকেশ্বরী নামের উৎপত্তি। ঢাকার সবচেয়ে প্রচীন মন্দির ঢাকেশ্বরী। বিরাট ধনাঢ্য ব্যাক্তি ছিলেন রমনাথ বাবু। তিনি রমনা কালীমন্দির নামে বিশাল এক মন্দির তৈরি করেন। মন্দির সংলগ্ন ছিলো বিশাল এক বাগান, সঙ্গে খেলাধুলার জায়গা। এভাবেই গড়ে ওঠে রমনা পার্ক। আহসান মঞ্জিল পুরনো ঢাকার ইসলামপুরে বুড়িগঙ্গা নদীর তীরে অবস্থিত। এটি পূর্বে ছিল ঢাকার নবাবদের প্রাসাদ। বর্তমানে এটি জাদুঘর হিসাবে ব্যাবহৃত হচ্ছে। চকবাজারের দক্ষিণে বুড়িগঙ্গার দিকে মুখ করে নির্মিত বড়কাটরা। ১৬৪৪ সালে দেওয়ান আবুল কাশেম কাটরাটি শাহ সুজার বাসস্থান হিসেবে নির্মাণ করেন। লালকুঠি, এটি নর্থব্রুক হল নামেও পরিচিত। বুড়িগঙ্গার পাড় ঘেঁষে ফরাশগঞ্জ মহল্লায় অবস্থিত। গোটা ইমারতটি লাল রঙে রঙিন বলে এর নাম হয়েছে লালকুঠি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধে আত্মদানকারী বীর শহীদদের স্মরণে জাতির শ্রদ্ধা নিবেদনের চিরন্তন প্রতীক জাতীয় স্মৃতিসৌধ । বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকা থেকে ৩৫ কিলোমিটার উত্তর পশ্চিমে সাভার উপজেলায় ৪৪ হেক্টর জায়গা নিয়ে স্থাপন করা হয়েছে স্মৃতি সৌধ কমপ্লেক্স।

ঢাকা বহু বিখ্যাত লোকের জন্মস্থান। শামসুর রাহমান ১৯২৯ সালের ২৩ অক্টোবর ঢাকার মাহুতটুলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি বাংলাদেশ ও আধুনিক বাংলা সাহিত্যের অন্যতম প্রধান কবি। বিংশ শতাব্দীর দ্বিতীয়ভাগে দুই বাংলায় তার শ্রেষ্ঠত্ব ও জনপ্রিয়তা প্রতিষ্ঠিত। আজম খান ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে ১৯৫০ সালের ২৮শে ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তাকে বাংলাদেশের পপ ও ব্যান্ড সঙ্গীতের একজন অগ্রপথিক বা গুরু হিসেবে গণ্য করা হয়। সর্বোপরি তিনি একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে তিনি অংশ নেন। খাজা আহসানুল্লাহ (১৮৪৬-১৯০১) ঢাকার নওয়াব ছিলেন। ১৮৪৬ খ্রিষ্টাব্দের ২২ আগস্ট ঢাকার বিখ্যাত নওয়াব পরিবারে তার জন্ম হয়। অমর্ত্য সেন বিখ্যাত নোবেল বিজয়ী, অর্থনীতিবিদ। গর্ব করে বাঙাল তিনি। পূর্বপুরুষদের জন্মস্থান বাংলাদেশের ঢাকা। যদিও অমর্ত্য সেনের জন্ম শান্তিনিকেতনে। পৈত্রিক বাড়ি হচ্ছে পুরানো ঢাকার ওয়ারি অঞ্চলে- রমনায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কাছেই। আলবার্ট আইনস্টাইন আমাদের কাছে যতটা পরিচিত, সত্যেন্দ্রনাথ বসু ততটা নন। কারণ প্রচার মাধ্যমে আইনস্টাইন সুযোগ পেয়েছেন সত্যেন বসুর চেয়ে বেশি। ‘বোস-আইনস্টাইন’ তত্ত্বের আলোচনায় সত্যেন বসুর নামের ঠিক পরেই আইনস্টাইনের নাম উচ্চারিত হয়। কিন্তু বিশ্ব-বিখ্যাত এই তত্ত্বের প্রায় পুরো কৃতিত্বই সত্যেন বসুর। ১৯২১ সালে প্রতিষ্ঠিত হলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। সত্যেন বসু যোগ দিলেন এই নতুন বিশ্ববিদ্যালয়ের পদার্থবিজ্ঞান বিভাগের রিডার বা এসোসিয়েট প্রফেসর পদে। সত্যেন্দ্রনাথ বসু তাঁর জীবনের শ্রেষ্ঠতম অংশ অতিবাহিত করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। তাঁর খ্যাতির উৎস ও বিস্তার ভূমি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি সাধারণ অপরিসর ঘরে বসে সত্যেন বসু লিখলেন “প্ল্যাঙ্কের সূত্র ও আলোক কোয়ান্টাম তত্ত্ব”। বাঙলা গানের সোনালী যুগে প্রেম এবং বিরহের গানের কিন্নরকণ্ঠী গায়িকা উৎপলা সেন। ১৯২৪ সালে ঢাকায় জন্মগ্রহন করেন। তিনি প্রথম জনসমক্ষে আসেন তেরো বছর বয়সে ঢাকা রেডিওতে। শুধু গান নয়, অভিনয়, আবৃত্তিও করতেন ঢাকা রেডিওতে। ১৯৪১ সালে রবীন্দ্রপ্রয়াণের দিবসে ‘নির্ঝরের স্বপ্নভঙ্গ’-এর আবৃত্তি প্রচারিত হয়েছিল কিশোরী উৎপলার কণ্ঠে। সাম্যময় বন্দ্যোপাধ্যায় নামটা শুনেছেন? অনেকেই শোনেননি হয়তো। এবার যদি বলি ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম শুনেছেন? তাহলে আপামর বাঙালি একযোগে হাত তুলবেন। বাংলা সিনেমার জগতে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায় একটি প্রতিষ্ঠান। সরস রঙ্গ ও কৌতুকের জন্য যে ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের খ্যাতি দুই বাংলাজুড়ে, তিনি ঢাকার সন্তান। তাই হয়তো সব জায়গাতেই ‘ঢাকার ভানু’ হিসেবে নিজেকে পরিচিত করতে ভালোবাসতেন তিনি। কৈশোরে বিপ্লবী দীনেশ গুপ্তের পার্শ্বচর হিসেবে তাঁর নির্দেশমাফিক টিফিনবক্সে রিভলবার আর ‘নিষিদ্ধ’ বই পাচার করতেন তিনি। তৎকালীন পূর্ব বাংলার রাজধানী ঢাকার সদরঘাট দিয়ে পুলিশ ও সরকারি কর্মচারীদের আসা-যাওয়ার ওপর রাখতেন তীক্ষ্ণ নজর। এক কথায়, তিনি ছিলেন খুদে গুপ্তচর। পরে ব্রিটিশবিরোধী বিপ্লবী মাস্টারদা সূর্যসেন, অনন্ত সিং—এঁদের সঙ্গে পরিচয় ও জানাশোনা হয় ভানু বন্দ্যোপাধ্যায়ের।

ঢাকার নামের সাথে সাথেই একটা সময় ভেসে আসতো মসলিনের নাম। শোনা যায়, ঢাকাইয়া মসলিন এতটাই পাতলা ছিলো এবং এর কারুকাজ এতটাই সূক্ষ্ম ছিলো যে একটি মসলিন শাড়ি ভাঁজ করে ছোট একটি দেশলাইয়ের বাক্সে অনায়েসেই ভরে রাখা যেত। মসলিনের উপর যে জ্যামিতিক নকশাদার বা বুটিদার বস্ত্র বোনা হতো তারই নাম জামদানি শাড়ি। ঐতিহ্যবাহী ঢাকাই জামদানি শাড়ির কদর সেই প্রাচীনকাল থেকেই। ঢাকার খাবার মানেই স্বাদে গন্ধে ভরপুর সব খাবারের পসরা। কাচ্চি বিরিয়ানী, কাবাব, জাফরানি মিষ্টি, বাকড়খানি কিংবা বিউটি লাচ্ছি ঢাকার বিখ্যাত খাবার।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.