এই খেলা দেখার জন্যই তো সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনের আগেও রাত জাগেন ফুটবল অনুরাগীরা। নিজেদের মধ্যে ছোট ছোট পাস, মাঝেমধ্যে কিছু চকিত ড্রিবল, ওয়ান টাচ, কেবল গ্যালারী শো নয়, বরং কার্যকরী কিছু মুভ তৈরী, শুরু থেকেই মুহুর্মুহু আক্রমণ শানিয়ে গোল তুলে নেওয়ার চেষ্টা, আবার নিজেদের প্রয়োজনমত খেলার গতিনিয়ন্ত্রণ – গতবারের চ্যাম্পিয়নদের যেভাবে শুরু করার কথা, ঠিক সেই ভাবেই এবারের কোপায় যাত্রা শুরু করলো তিতের ব্রাজিল (Selecao)।
ব্রাজিল সমর্থকদের জন্য তো বটেই, তবে যেকোনও ফুটবলপ্রেমীর জন্যই ব্রাজিল (Brazil national football team) বনাম ভেনেজুয়েলা (Venezuela national football team) ম্যাচ চোখের আরাম। কোভিডের করাল গ্রাসে মূল স্কোয়াডের ৮ জন ফুটবলার না থাকলেও খুব একটা ফিকে লাগেনি পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে বেশী খনিজ তেলের অধিকারী দেশটির। কিন্তু তুল্যমূল্য লড়াই করতে চাইলেও ব্রাজিলের সামনে দাঁড়ানোর মতো রসদ ভেনেজুয়েলার পর্তুগিজ কোচ হোসে পেসেইরোর (José Peseiro) কাছেও ছিল না।
প্রত্যাশামতোই আক্রমণাত্মক দল সাজিয়েছিলেন তিতে (Tite)। ম্যাচ প্রিভিউতে যেরকম বলা হয়েছিল, ঠিক সেভাবেই লিভারপুল (Liverpool F.C.) স্ট্রাইকার রবার্তো ফার্মিনহোকে (Roberto Firmino) বসিয়ে লুকাস প্যাকেতা-কে (Lucas Paquetá) দিয়ে শুরু করেছিলেন তিতে। সঙ্গে আপফ্রন্টে ত্রিফলা – নেইমার, রিচার্লিসন এবং গ্যাব্রিয়েল জেসাস।
ম্যাচের শুরু থেকেই একের পর এক আক্রমণ আছড়ে পড়তে থাকে ভেনেজুয়েলার বক্সে। বোঝাই যাচ্ছিলো, ব্রাজিলের গোল আসা কেবলমাত্র সময়ের অপেক্ষা। দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে খেলার শুরুর প্রথম ১০ মিনিটেই অন্তত দুগোলের লিড পাওয়ার কথা ব্রাজিলের। ৭ মিনিটের মাথায় নেইমারের তোলা ক্রসে ফাঁকা গোল পেয়ে গিয়েছিলেন ম্যানচেস্টার সিটির (Manchester City F.C.) হয়ে সপ্তাহ দুয়েক আগে চ্যাম্পিয়ন্স লীগে (UEFA Champions League) রানার্স হওয়া গ্যাব্রিয়েল জেসাস (Gabriel Jesus)। কিন্তু বলে পা ঠেকাতে ব্যর্থ হন উনি।
১০ মিনিটের মাথায় পরপর দুটো সুযোগ পেয়ে গিয়েছিলো ব্রাজিল। প্রথমে তিনজন ভেনেজুয়েলান ডিফেন্ডারের মধ্যে থেকে নেইমারের থ্রু থেকে একের বিরুদ্ধে এক পরিস্থিতিতে গোলে বল ঠেলতে ব্যর্থ হন রিচার্লিসন (Richarlison)। কর্নার পায় ব্রাজিল। কিন্তু নেইমারের শর্ট কর্নার থেকে রেনান লোডির (Renan Lodi) বক্সে ভাসানো ক্রসে মিলিতাওয়ের (Éder Militão) হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
অসংখ্য সুযোগ নষ্টের প্রদর্শনীর পর শেষমেশ ম্যাচের ২২ মিনিটে গোলের মুখ খুলতে সমর্থ হয় ব্রাজিল। নেইমারের কর্নার ভেনেজুয়েলার বক্সে এসে পড়ে। রিচার্লিসন হেডে বল নামিয়ে দিলে জটলার মধ্যে থেকে কোনওরকমে বল গোলে ঠেলে দেন সেন্ট্রাল ব্যাক মারকুইনোস (Marquinhos)। দৃষ্টিনন্দন গোল না হলেও কাজের কাজটি করে দেন তিনি (১-০)।
২৯ মিনিটে ভেনেজুয়েলান ডিফেন্সের ভুলে বক্সের মধ্যে নেইমার বল পেয়ে গেলেও গোলে বল রাখতে ব্যর্থ হন তিনি।
বিরতিতেই দুটো পরিবর্তন নিয়ে নেন ব্রাজিলের কোচ তিতে। প্যাকেতার বদলে ফ্ল্যামিংগো-তে (Flamengo) খেলা অ্যাটাকিং মিডফিন্ডার এভার্টন রিবেইরো (Éverton Ribeiro) আর রেনান লোডি-কে তুলে অ্যালেক্স সান্দ্রো-কে (Alex Sandro) নামান তিনি।
দ্বিতীয়ার্ধে ৫৩ মিনিটে ম্যাচের সহজতম সুযোগটি নষ্ট করেন নেইমার। রিবেইরো আর গ্যাব্রিয়েল জেসাস নিজেদের মধ্যে ওয়ান টাচ খেলার পরে জেসাস এর বাড়ানো বলে গোললাইনের কয়েক ইঞ্চি দূরত্বে ফাঁকা গোলে বল ঠেলতে ব্যর্থ হন পিএসজি তারকা।
অতঃপর ম্যাচের ৬৩ মিনিটে ইনসিওরেন্স গোলটি তুলে নেয় ব্রাজিল। রিবেইরোর আরেকটা ওয়ান টাচ ধরে ড্যানিলো (Danilo) বক্সের মধ্যে ঢোকার পর চমৎকার বডি ফেইন্টে ভেনেজুয়েলান স্টপার লুই মাগো-কে বিট করলে সাইডব্যাক য়োহান কুমানা পিছন থেকে ট্রিপ করে ফেলে দেন ড্যানিলো-কে। পেনাল্টি থেকে ঠান্ডা মাথায় গোল করতে ভুল করেননি নেইমার (২-০)। ব্রাজিলের জার্সিতে ১০৬ ম্যাচে ৬৭ গোল হয়ে গেল নেইমারের (Neymar Jr.)। সামনে শুধু পেলে (৭৪)।
এরপরেই রিচার্লিসনকে তুলে নিয়ে গ্যাব্রিয়েল বারবোসা বা গাবি-কে (Gabriel Barbosa) নামান তিতে। তিন পয়েন্ট প্রায় নিশ্চিত বুঝে পজেশনাল ফুটবল খেলতে শুরু করে ব্রাজিল। ৮৩ মিনিটে আবারও এক সহজ সুযোগ নষ্ট করেন নেইমার। খেলার একেবারে অন্তিমলগ্নে ৮৮ মিনিটে ব্রাজিলের ডিফেন্স থেকে আসা লম্বা থ্রু বল ধরে আগুয়ান ভেনেজুয়েলান গোলরক্ষককে কাটিয়ে বক্সে সাজিয়ে দেন নেইমার। প্রায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বুক দিয়ে বল গোলে ঢোকান গাবি (৩-০)।
সহজ সুযোগ নষ্ট না করলে এই ম্যাচ ব্রাজিলের অন্তত ৫-৬ গোলে জেতা উচিত ছিল। প্রতিদিন গোলের মুখ নাও খুলতে পারে। সেক্ষত্রে এইসব সুযোগ নষ্টের খেসারত দিতে হতে পারে কিন্তু। তবে যাই হোক, এবারের কোপাতেও যে হট ফেভারিট ব্রাজিলকে আটকাতে যথেষ্ট বেগ পেতে হবে বাকি দলগুলিকে, আজকের ম্যাচ থেকেই তা পরিষ্কার।
গ্রুপ এ-র অপর ম্যাচে ইকুয়েডরকে ১-০ গোলে হারালো কলম্বিয়া।
আজ নামছে আর্জেন্টিনা: গ্ৰুপ বি-র প্রথম ম্যাচে চিলির বিরুদ্ধে আজ মুখোমুখি আর্জেন্টিনা। খেলা শুরু রাত আড়াইটায়।