ম্যাচে ৪৭টি (আর্জেন্টিনা – ২০, কলম্বিয়া – ২৭) ফাউল হওয়ার দিনে কলম্বিয়াকে পেনাল্টি শুট-আউটে হারিয়ে ফাইনালে পৌঁছলো আর্জেন্টিনা (Argentina national football team)। এই নিয়ে শেষ চারটি কোপা আমেরিকায় তৃতীয় বার ফাইনালে উঠলো আর্জেন্টিনা, তবে এবার ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী ব্রাজিল (Brazil national football team) যাদের কাছে ০-২ ব্যবধানে সেমিফাইনালে হেরে ২০১৯ কোপা থেকে ছিটকে যেতে হয়েছিল মেসিদের।
৪ টি গোল এবং ৫ টি অ্যাসিস্ট করে এই টুর্নামেন্টে এই মুহূর্তে সেরা খেলোয়াড় লিওনেল মেসি (Lionel Messi)। বিশেষজ্ঞ এবং অনুগামীদের মতে এই বছর যেভাবে খেলছেন মেসি, ব্যালন ডি’ওর-এর (Ballon d’Or) রেসে তাঁকে টেক্কা দেওয়া আর চাট্টিখানি কথা নয়। আজও ম্যাচের সপ্তম মিনিটে সেই মেসির পাস থেকেই গোল করে আর্জেন্টিনাকে এগিয়ে দেন ইন্টার মিলানের (Inter Milan) স্টারবয় লাউতারো মার্টিনেজ (Lautaro Martínez)। রডরিগো ডি পলের (Rodrigo De Paul) বুদ্ধিদীপ্ত থ্রু বল পান মেসি, যিনি তাঁর পায়ের জাদু দেখিয়ে বল সাজিয়ে দেন লাউতারোকে, এবং গোলের ১০ গজের মধ্যে থেকে গোল তুলতে ভুল করেননি তিনি (১-০)।
তবে আজ যেরকম আধিপত্য নিয়ে খেলা উচিত ছিল লা আলবিসিলেস্তে-দের (La Albiceleste), সেই অনুরূপে তাঁরা খেলতে ব্যর্থ। অবশ্য তাঁদের দোষ দেওয়াও যায়না! প্রথম মিনিট থেকে নব্বই মিনিট অবদি যেরকম ফিজিক্যাল ফুটবল খেলা হয়েছে, তাতে সুন্দর উপভোগ্য ফুটবল উপহার দেওয়া সম্ভব ছিল না আর্জেন্টিনার পক্ষে। কলম্বিয়ার (Colombia national football team) খেলোয়াররাই ২৭টি ফাউল করেন, তবে সব থেকে বিশ্রী ফাউলটি করা হয় মেসির ওপর। তাঁর বাঁ পা দিয়ে রক্তক্ষরণ হতে থাকে, কার্যত পুরো দ্বিতীয়ার্ধ তিনি সেই আহত অবস্থায় খেললেন, এবং আবারও দেখিয়ে দিলেন শুধু ট্রফির বিচারে দেশের প্রতি দায়িত্ববোধ প্রমান করে – এই ধারণাটা বোধহয় সঠিক নয়।
খেলার ৬১ মিনিটের মাথায় গোল শোধ করে কলম্বিয়া। মিডফিল্ডার লুইস দিয়াস (Luis Díaz) বাঁপ্রান্ত থেকে ছুটে পেজেলাকে (Germán Pezzella) কাটিয়ে অসম্ভব ভালো একটি গোল উপহার দেন (১-১)। আর্জেন্টিনা তাদের গা ছাড়া মনোভাবের খেসারত দেয়। কিন্তু আবারও ঘুরে দাঁড়ায় তারা, তবে সময় এবং ভাগ্য উভয়ই তাদের অনুকূলে ছিলোনা। একবার মেসির শট পোস্টে লেগে বেরিয়ে যায়, আর একবার কলম্বিয়ার গোলরক্ষক অস্পিনাকে (David Ospina) মাঝমাঠে কাটিয়েও খালি গোলে বল ঢোকাতে পারেননি ডি মারিয়া (Ángel Di María) এবং মার্টিনেজ। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে।
২০১৫ এবং ২০১৬ কোপা আমেরিকা ফাইনালে আর্জেন্টিনাকে হারায় চিলি (Chile national football team), এবং দুবারই টাইব্রেকারে হারতে হয় আর্জেন্টিনাকে। প্রথম পেনাল্টি নিতে এসে কলম্বিয়াকে এগিয়ে দেন জুয়ান কুয়াদরাডো (Juan Cuadrado)। আর্জেন্টিনার হয়ে প্রথম পেনাল্টি নিতে আসেন লিও মেসি। আহত বাঁ পা দিয়েই পেনাল্টিতে গোল করে যান আধুনিক ফুটবলের এই কিংবদন্তি। এরপরেই ঘটে সবচেয়ে আলোচ্য বিষয়। বাকি চারটি পেনাল্টি কিকের মধ্যে তিনটি বাঁচান আর্জেন্টিনার গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্টিনেজ (Emiliano Martínez)। নিজের দক্ষতার শিখরে গিয়ে তিনি ডেভিনসন স্যাঞ্চেজ (Davinson Sánchez), ইয়েরী মিনা (Yerry Mina) এবং কার্ডনা-র (Edwin Cardona) পেনাল্টি বাঁচান।
আর্জেন্টিনার হয়ে পেনাল্টি মিস করেন রোদ্রিগো ডি পল, তবে লিয়ানড্রো পারেদেস (Leandro Paredes) এবং লাউটারো মার্টিনেজের গোলে ৪-২ ব্যবধানে কলম্বিয়াকে হারিয়ে ২০২১-এর কোপা আমেরিকার (2021 Copa América) ফাইনালের দরজা খোলে আর্জেন্টিনা।
এখন তাদের সামনে একটাই বাধা, চিরশত্রু ব্রাজিল, যাদের হারালেই দীর্ঘ ২৮ বছরের ট্রফি খরা মিটবে দক্ষিণ আমেরিকার এই দেশের।