ইউরো ২০২০: ফ্রান্স বনাম জার্মানির হেভিওয়েট দ্বৈরথে জয় পেলো অধুনা বিশ্ব-চ্যাম্পিয়নরা

Share

Facebook
Twitter
WhatsApp

[fblike]

শেষ দুই বিশ্বকাপের বিজয়ীরা মুখোমুখি গ্রুপ এফ-এর নিজেদের প্রথম ম্যাচে। এই গ্রুপটিই এই ইউরোর গ্রুপ অফ ডেথ (Group of Death) বলে গণ্য হচ্ছে। ইউরোপ সেরা পর্তুগাল (Portugal national football team) আগের ম্যাচেই প্রত্যয়ী হাঙ্গেরিকে (Hungary national football team) তিন গোলে হারিয়ে মানসিক ভাবে কিছুটা এগিয়ে গিয়েছিলো। ফলে শেষ ষোলোয় ওঠার লড়াইতে এককদম এগিয়ে থাকতে চেয়েছিলো দুই দলই।

বায়ার্ন মিউনিখের (FC Bayern Munich) ঘরের মাঠ অ্যালায়েঞ্জ এরিনা-তে (Allianz Arena) দেশের জার্সিতে ফুল ফোটাতে পারলেন না টমাস মুলার (Thomas Muller), ম্যানুয়েল নয়্যার (Manuel Neuer) বা সার্জে গনব্রী-রা (Serge Gnabry)। দিদিয়ের দেশঁ (Didier Deschamps) এবং জোয়াকিম লো (Joachim Löw) – দুই কোচই বিশ্বকাপজয়ী। দীর্ঘ পনেরো বছর ডাই ম্যানশাফটের (Die Mannschaft) কোচ হিসেবে সাফল্যের সাথে সাথে গত তিন বছর ধরে ব্যর্থতার বোঝাও বেশ ভারী হয়েছে জোয়াকিম লো-র কাঁধে। এই টুর্নামেন্টের শেষেই দায়িত্ব যাবে বায়ার্ন মিউনিখের সদ্য-প্রাক্তন ম্যানেজার হ্যান্সি ফ্লিকের (Hansi Flick) হাতে। জার্মান আত্মাভিমান গভীর। পাহাড় প্রমাণ বিতর্কের জবাব দিয়েই দায়িত্ব ছাড়তে চাইবেন লো। অপর দিকে খেলোয়াড় এবং কোচ হিসেবে বিশ্বজয়ী দিদিয়ের দেশঁ তাঁর সোনালী রূপকথা ক্রমবর্ধমান রাখতে চাইবেন – এমনটাই ভাবা হয়েছিলো।

খেলার শুরু থেকেই দুই অর্ধে উঠে-নেমে দাপট দেখাতে থাকে দুই দল। জার্মানির তাল কাটে খেলার ২০ মিনিটে। ম্যাট হামেলসের (Mats Hummels) আত্মঘাতী গোলে ফ্রান্স এগিয়ে যায়। টুর্নামেন্টের তিন নম্বর আত্মঘাতী গোল এটি। পল পোগবার (Paul Pogba) দুর্দান্ত একটি উঁচু করে রাখা পাস বক্সের ডান দিকে ফাঁকায় পান লুকাস হার্নান্দেজ (Lucas Hernandez)। নিজের ক্লাবের মাঠে নিজের জন্য অনেকটা জায়গা তৈরী করে নেন ফরাসী ডিফেন্ডার। কিলিয়ান এম্ব্যাপেকে (Kylian Mbappe) লক্ষ্য করে ফরাসী লেফটব্যাকের বিষাক্ত ক্রস ছয় গজ বক্সের ভিতর বিপদমুক্ত করতে গিয়ে নিজের গোলেই ঢুকিয়ে দেন জার্মান ডিফেন্ডার হামেলস। তার ক্যাপ্টেন নয়্যারের কিছুই করার ছিল না।

এরপর থেকে ফ্রান্সের খেলার ধরণ সরলরেখার মতন। জমাট বেঁধে দূর্গ সামলানো আর বল পেলে দুই স্টপারের মাঝে এম্ব্যাপের উদ্দেশ্যে বল বাড়ানো। দীর্ঘদিন বাদে জাতীয় দলে ফেরা হামেলস আর আন্তোনিও রুডিগারের (Antonio Rudiger) মধ্যে মাঝেমধ্যেই অনেকটা জায়গা তৈরী হচ্ছিলো। এম্ব্যাপের স্কিল আর গতি বেশ কয়েকবার সমস্যায় ফেলেছে জার্মান রক্ষণকে। তার সাথে সমান্তরাল ভাবে উঠে এসেছেন আদ্রিয়েন রাবিও (Adrien Rabiot), আন্তোয়ান গ্রিজম্যান (Antoine Griezmann), পোগবা বা করিম বেনজেমা (Karim Benzema)। এম্ব্যাপে বল পেলেই দুর্বল গতির জার্মান রক্ষণের ত্রাহি ত্রাহি রব উঠে যাচ্ছিলো।

অসাধারণ খেললেন পল পোগবা। ষ্টার অফ দ্য ম্যাচ তিনিই। ছবি সৌজন্যে – উয়েফা ইউরো ২০২০ অফিসিয়াল পেজ

৫২ মিনিটে জাতীয় দলের হয়ে রাবিওর প্রথম গোলটা আজই হয়তো হয়ে যেত যদি না বল প্রথম পোস্টের বাইরের অংশে লেগে প্রতিহত হতো। জুভেন্তাস (Juventus F.C.) মিডফিল্ডারের পাশেই ফাঁকায় ছিলেন গ্রিজম্যান। এরপরেও বহুবার জার্মানির রক্ষাকর্তা হয়ে দাঁড়িয়েছে কখনো হামেলসের শেষ মুহূর্তের স্লাইডিং ট্যাকেল বা কখনো অফসাইড ফ্ল্যাগ। অফসাইডের ফাঁদে এম্ব্যাপের দুরন্ত ফিনিশ এবং বেনজেমার দীর্ঘ পাঁচ বছর পর জাতীয় দলে প্রত্যাবর্তনের পর বহু প্রত্যাশিত গোল ইউরো ২০২০-র খাতায় উঠলো না। পোগবা একটি অসাধারণ খেলা উপহার দিলেন।

তবে তার অন্তরালে এন’গেলো কান্তের (N’gelo Kante) ভূমিকা অনস্বীকার্য। চেলসিতে (Chelsea F.C.) যে বক্স-টু-বক্স খেলা টা ইদানিং খেলছেন, তার থেকে ভিন্ন একটি দায়িত্ব পালন করলেন আজ। তার কারণ প্রথমার্ধেই গোল পেয়ে যাওয়া এবং ফ্রান্স দলটার গভীরতা। বায়ার্নের হয়ে বুন্দেশলিগাতে (Bundeshliga) নিয়মিত খেলা দুই সাইডব্যাক হার্নান্দেজ আর বেঞ্জামিন পাভার্ড (Benjamin Pavard), রিয়াল মাদ্রিদের (Real Madrid CF) স্তম্ভ রাফায়েল ভারানে (Raphael Varane), পারি সাঁ -জার্মেইনের (Paris Saint-Germain) হয়ে লিগ-ওয়ান (Ligue-one) বিজয়ী প্রেসনেল কিম্পেম্বে (Presnel Kimpembe) ফ্রান্সের ডিফেন্স মোটামুটি অটুট রেখেছিলেন।

লোর প্রশিক্ষণাধীন জার্মান দলের গত চার বছর ধরে প্রধান সমস্যা হলো একাধিক ছোট এবং আড়াআড়ি পাস খেলা। এতে বিপক্ষ দল ডিফেন্স গুছিয়ে নিতে পারে সহজেই। দলে কারুর একক দক্ষতায় গোল করার ক্ষমতা না থাকায় তাদের ফরওয়ার্ড লাইন বক্সের আশেপাশে প্রচুর পাস খেললেও গোল করতে পারছে না। মিডফিল্ড জেনারেল টনি ক্রুজ (Tony Croos) গোটা ম্যাচেই বেশ স্তিমিত ছিলেন। পোগবার সাথে ডুয়েলে একাধিকবার পরাস্ত হওয়ার সাথে তার ফ্রীকিকগুলো-ও খুব একটা ত্রাসের সৃষ্টি করতে পারেনি।

শুরুটা ভালো হলো না টনি ক্রুজ-দের। ছবি সৌজন্যে – উয়েফা ইউরো ২০২০ অফিসিয়াল পেজ

অবশ্য জার্মানি প্রথমার্ধে একাধিক সুযোগ তৈরী করতে পেরেছিলো গোল পরিশোধের। মুলারের মাথা ছুঁয়ে বেরিয়ে যাওয়া ক্রস, গনব্রী এবং ইকের গুন্দোয়ানের (Iker Gundogan) শট ফরাসী গোলরক্ষক টটেনহ্যাম হটস্পারের (Tottenham Hotspur) হুগো লরিস-(Hugo Lloris) কে পরীক্ষার মধ্যে ফেলতে পারেনি। দ্বিতীয়ার্ধেও গনব্রী দারুন সুযোগ পায়। সদ্য উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লীগ জয়ী কাই হ্যাভর্ৎজ (Kai Havertz) এবং এবং পঁচাত্তর মিনিটে নাম টিমো ওয়ার্নারকে (Timo Warner) দেখে মনে হচ্ছিলো তারা জাতীয় দলে এখনো মানিয়ে নিতে পারেনি। মোনাকো এফ সি (A.S. Monaco FC)-র হয়ে এই মরসুমে ৩৫ ম্যাচে ১৬ গোল করা কেভিন ভল্যান্ডের (Kevin Volland) নির্বাচন নিয়ে বেশ জলঘোলা হয়েছিল। কারণ তার সাদা জার্সিতে পরিসংখ্যান খুব খারাপ (১২ ম্যাচে সাকুল্যে একটি গোল)। দীর্ঘ দু বছর বাদে জাতীয় দলে ফিরে আসার পর মুলার এবিং হামেলস আহামরি না খেললেও মন্দ নন। মিউনিখের দুই দলে খেলা দুই সেড হাফ, বায়ার্নের জশুয়া কিমিচ (Joshua Kimmich) আর বরুসিয়া মনখেনগ্ল্যাডবাখের (Borussia Monchengladbach) ম্যাথিয়াস গিন্টার (Matthias Ginter) সাধ্য মতো যোগান দেবার চেষ্টা করে গেলেও গতির অভাব আর গোল করার লোকের অনুপস্থিতি ভুগিয়েই চলেছে জার্মান দলকে। রুডিগারের শৃঙ্খলার অভাব ছিল। তাঁর উপর হঠাৎ লুই সুয়ারেজ (Luis Suarez) ভর করেছিল বোধহয়। পোগবার পিঠে ছোট্ট কামড়ের চেষ্টা চলেছিল একবার। রক্ষণের ক্ষেত্রে তার চেলসির সতীর্থ ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার কান্তে উল্টোদিকে থাকায় বেশ কয়েকবার বিব্রত লেগেছে তাকে।

ফিফা ক্রমপর্যায়ে (FIFA Ranking) বিশ্বের দু নম্বর লে ব্লুরা (Les Bleus) বিশ্বের ১২ নম্বর দলকে তাদের ঘরের মাঠে গিয়ে হারিয়ে এলো এক অতি গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচে। ৬২ শতাংশ বল নিজের অধীনে রেখেও তিন কাঠির লক্ষণরেখা পেরোনো হলোনা জার্মান ব্রিগেডের। অতএব আগামী শনিবারের ক্রিস্টিয়ানো রোনাল্ডোর (Christiano Ronaldo) পর্তুগালের বিরুদ্ধে ম্যাচে জোয়াকিম লো-এর টিমের পারফরম্যান্স ‘হাই’ না করলে জার্মানদের দীর্ঘ ২৫ বছর পর ইউরো জয়ের আশার পঞ্চত্বপ্রাপ্তি ঘটবে গ্রুপ স্টেজেই।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.