কোপায় শুরুটা আশাব্যঞ্জক হল না আর্জেন্তিনার। গ্ৰুপ বি-র প্রথম ম্যাচে চিলির সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করে ২ পয়েন্ট মাঠেই ফেলে আসতে হলো স্ক্যালোনির (Lionel Scaloni) দলকে।
মেসির সম্ভাব্য শেষ কোপা নিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মধ্যে এমনিতেই উত্তেজনা রয়েছে। জুনের ২৪ তারিখ ৩৪-এ পা দেবেন তিনি। এই ধরনের ঈশ্বর প্রদত্ত প্রতিভা সবসময় আসে না। ফলে মেসি ম্যাজিক দেখার জন্য উৎসুক ছিলেন আর্জেন্টিনার (Argentina national football team) ভক্তরা তথা মেসি অনুরাগীরা। তাঁদের হতাশ করেননি আধুনিক ফুটবলের এই কিংবদন্তি। প্রথমার্ধের ৩৩ মিনিটে বাঁ পায়ের জাদুতে অনবদ্য ফ্রিকিক থেকে গোলপোস্টের কোনায় বল জড়িয়ে বুঝিয়ে দিলেন – মেসি আছেন মেসিতেই। শূন্যে শরীর ছুঁড়েও বলের নাগাল পাননি চিলির গোলরক্ষক, বার্সেলোনায় (FC Barcelona) মেসির প্রাক্তন সতীর্থ ক্লডিও ব্রাভো (Claudio Bravo)। এমন গোল বারবার দেখতে ইচ্ছে করে। ভারত তথা এশিয়ার মেসি অনুরাগীদের রাত জাগা সার্থক।
লিওনেল মেসিকে (Lionel Messi) নিয়ে যতই প্রশংসা করা হোক, তা বোধহয় কমই হবে। নিজে গোল করলেন, টিমকে সামনে থেকে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিলেন, আক্রমণভাগের দায়িত্ব নিজের কাঁধে তুলে নিলেন, একের পর এক সুযোগ তৈরী করলেন। পরিসংখ্যান বলছে, চিলির বিরুদ্ধে মেসি একাই ৭টা শট মেরেছেন, যার মধ্যে ৩টে শট তেকাঠির মধ্যে ছিল। খান চারেক ভালো পাস বাড়িয়েছেন যেখান থেকে গোলের সুযোগ তৈরী হতে পারতো। কিন্তু সতীর্থরা, বিশেষত আপফ্রন্টের খেলোয়াড়রা সেভাবে মেসিকে সাহায্য করলেন কই?
ব্যক্তি লিওনেল মেসি যতই উজ্জ্বল হন, আর্জেন্তিনার বাকিরা সেভাবে জ্বলে উঠতে পারলেন না। একগাদা গোল মিসের খেসারত দিতে হলো নীল-সাদা জার্সিধারীদের। খেলার ১০ মিনিটের মাথায় গোলমুখ খোলার প্রথম সুযোগ এসেছিলো আর্জেন্তিনার সামনে। মাঝমাঠ থেকে বল পেয়ে কোনাকুনি দৌড়ে তিনজন ডিফেন্ডারকে বিট করে বক্সের ঠিক বাইরে থেকে লো সেলসো (Giovani Lo Celso) ঠিকানা লেখা ক্রস রাখেন চিলির ছয় গজের বক্সে। কিন্তু ইন্টার মিলানের স্ট্রাইকার (Inter Milan) লাউতারো মার্টিনেজ (Lautaro Martínez) বল গোলে রাখতে পারেননি।
১৪ মিনিটের মাথায় আবারও লো সেলসো একটা দারুন ব্যাকহিলে বল সাজিয়ে দেন নিকোলাস গঞ্জালেজের (Nicolás González) জন্য। কিন্তু তাঁর গড়ানো শট বাঁচিয়ে দেন চিলির গোলরক্ষক ব্রাভো। ম্যাচের ২০ মিনিটে মেসি দুর্দান্ত থ্রু বাড়ান নিকোলাস গঞ্জালেজের উদ্দেশ্যে। কিন্তু এবারও ব্রাভোর হাতে বল জমা দিয়ে দেন তিনি। ২৭ মিনিটে সুযোগ পায় চিলিও (Chile national football team)। কিন্তু মেনেজেসের শট অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপরেই কাঙ্খিত গোলটি তুলে নেয় আর্জেন্টিনা। বাঁ পায়ের বাঁকানো ফ্রিকিক থেকে গোল করে যান লিওনেল মেসি (১-০)।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই সমতা ফেরায় চিলি। দুই আর্জেন্তেনিয় ডিফেন্ডারের মধ্যে দিয়ে ডিফেন্সচেরা থ্রু বাড়ান পুলগার। কিন্তু চিলির ফরওয়ার্ড চিলির এডুয়ার্ডো ভারগাস (Eduardo Vargas) আর্জেন্তিনার আগুয়ান গোলরক্ষক এমিলিয়ানো মার্তিনেজের (Emiliano Martínez) গায়ে বল মারেন। যদিও ভার রিপ্লে-তে দেখা যায়, ভারগাসের শট ক্লিয়ার করতে গিয়ে আর্তুরো ভিদাল-কে (Arturo Vidal) ফাউল করে ফেলেন আর্জেন্তিনার লেফট ব্যাক নিকোলাস তাগলিয়াফিকো (Nicolás Tagliafico)। ফলে পেনাল্টি পায় চিলি। আর্তুরো ভিদালের পেনাল্টি মার্তিনেজ ডানদিকে ঝাঁপিয়ে সেভ করলেও ফিরতি বলে হেডে গোল করে যান ভারগাস (১-১)।
৬৭ মিনিটে লো সেলসো-কে তুলে পিএসজি-র (Paris Saint-Germain F.C.) উইঙ্গার এঞ্জেল ডি মারিয়া-কে (Ángel Di María) নামান আর্জেন্টিনার কোচ স্ক্যালোনি। কিন্তু লাভের লাভ সেরকম কিছু হলো না। ৮০ মিনিটে মেসি হালকা চিপে বল একেবারে প্লেটে করে সাজিয়ে দেন নিকোলাস গঞ্জালেজের জন্য। বক্সের মধ্যে অরক্ষিত অবস্থায় থাকলেও হেডে বল গোলের মধ্যে রাখতে পারেননি উনি। ইনজুরি টাইমে মেসির হেড ভালো ক্লিয়ার করে দেন রোকো। ফলে এক পয়েন্ট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হলো আর্জেন্তিনাকে।
রিও ডি জেনেইরোর (Rio de Janeiro) নিল্টন স্যান্টোস স্টেডিয়ামে (Estádio Nilton Santos) গ্রুপ বি-র খেলা শুরুর আগে আর্জেন্টিনার কিংবদন্তি প্রয়াত দিয়েগো মারাদোনার (Diego Maradona) স্মৃতিতে দর্শকশূন্য স্টেডিয়ামে শ্রদ্ধা জানানো হয়।