Chennaiyin FCSC East Bengal
January 18, 2021
0 - 0Full Time |
আগের যুদ্ধ অমীমাংসিত ছিল। আজকের যুদ্ধ-ও তাই।
আবার একটা লাল কার্ড। আবার রাহুল গুপ্ত বাঁশি মুখে ম্যাচ পরিচালনার দায়িত্বে। আবার একটা দুর্দান্ত লড়াই। আবার গোলশূন্য ড্র। না না, এটা জামশেদপুর ম্যাচ নয়। আজ ছিল চেন্নাইয়িনের সাথে ফিরতি খেলা।
এবার প্রশ্ন ওঠে, ইস্টবেঙ্গলের কি তবে দশ জনেই খেলা শুরু করা উচিত ! রেফারিরা নিশ্চই জানে ইস্টবেঙ্গলের রং লাল-হলুদ, তবে সেটা বারবার পকেটের কার্ড দেখিয়ে খেলোয়াড়দের মনে করিয়ে দেওয়া হচ্ছে। অজয় ছেত্রীর করা প্রথম ফাউলেই সম্ভবতঃ তাকে হলুদ কার্ড দেখানো হয়, দ্বিতীয়টা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অবকাশ নেই। প্রশ্ন ওঠে তখন যখন বিপক্ষ দলের বেলায় পকেটের বোতাম বন্ধ হয়ে যায়।
এবার আসা যাক খেলার কথায়। প্রথম অর্ধে দেবজিতের প্রতিটা আউটিং-এ ইস্টবেঙ্গল সমর্থকদের হৃৎপিন্ড থেমে যাচ্ছিলো। প্রথম ত্রিশ মিনিট রক্ষণ রেখা একটু উপরে উঠে থাকায় বিপক্ষ কোচ সাবা দুজন স্টপারের মাঝের জায়গায় লম্বা বল ফেলে দেবজিতের দুর্বলতার সুযোগ নিতে চেয়েছিলেন। সাফল্য-ও প্রায় পেয়ে গেছিলেন। কিন্তু দশ জন হয়ে যাবার পর ডিফেন্স অনেকটা গভীরে চলে আসায় আর চেন্নাইয়িন অনেকটা উঠে আসায় গোলকীপার আর ডিফেন্সের মধ্যে দূরত্ব কমে যায় এবং চেন্নাইয়িন দূর থেকে নেয়া দ্বিতীয় অর্ধের শটগুলো দুরন্ত ক্ষিপ্রতার সাথে বাঁচিয়ে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ দেবজিৎ মজুমদার।
ফক্স এবং নেভিল প্রতিদিন নিজের জাত চেনাচ্ছে। নড়বড়ে নারায়ণ দাস আজ বেশ ভালো। তাকে রক্ষণ সামলাতেই মনোনিবেশ করতে বলা হয়েছিল বলে মনে হয়। নারায়ণ একেবারেই আক্রমণে না যাওয়ায় সুরচন্দ্রকে বাঁ দিকের উইংয়ে প্রথম অর্ধে একেবারেই দিশাহারা লেগেছে। ব্রাইটের সাথে তালমিল এখনো তৈরী হয়নি তার। প্রথমার্ধে আর কিছু আক্রমণ হয়েছে ডান প্রান্তে অঙ্কিতের দিক দিয়ে। অঙ্কিত -ও যে খারাপ খেলেছে তা নয়। দ্বিতীয়ার্ধে সে মূলতঃ রক্ষণের শক্তি বাড়ায়। মাঘমা উঠে যাওয়ায় ওই খালি জায়গাটা কাজে লাগাতে চেয়েছে চেন্নাইয়িন একাধিক ক্ষেত্রে। দীর্ঘদেহী সিপোভিচের বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেড আর থাপার একটা প্রচেষ্টা ছাড়া ডিফেন্স খুব একটা চাপে তেমন পড়েনি প্রথমার্ধে। পরের অর্ধেও বক্সের কোন থেকে আর মাথা থেকে খান তিনেক শট দেবজিৎকে পরীক্ষায় ফেললেও ডিফেন্সকে তেমন ভঙ্গুর লাগেনি। অনেকেই হয়তো ভাবছেন ফাউলার নারায়ণের জায়গায় জাইরুকে কেন খেলাচ্ছেন না। জাইরুর রক্ষণ শক্তি দুর্বল। যেখানে ইস্টবেঙ্গলের গোলকিপারের বেরিয়ে আসার দুর্বলতা বারবার ধরা পড়েছে সেখানে ক্রস করতে দেওয়ার বিলাসিতা কোন কোচ নেবে।
যুদ্ধ না হারার লড়াই-এ আজকের আরেক ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ কিন্তু মাঘমা। দ্বিতীয়ার্ধে মাঘমা মাঝমাঠের নেতৃত্ব নেয়ায় সুরচন্দ্র আক্রমণে যেতে শুরু করে এবং পার্শ্বরেখা বরাবর আক্রমণে বেশ সাবলীলতার পরিচয় দেয়। মিলান ডিফেন্সিভ দায়িত্বে ভালো হলেও ‘অব দ্য বল ‘ গতিবিধি প্রথম কিছু মিনিট বেশ খারাপ। তবে মিলানের সেন্টার সার্কলে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকায় অনিরুধ থাপাকে নিষ্প্রভ লেগেছে। ও ঠিক ফুসবলের কাঠের পুতুলের মতন। পায়ের উপর নিজের নিয়ন্ত্রণ খুব কম থাকায় ওর পায়ে বল পড়লে বিপক্ষও জানেনা কোথায় যাবে। অবশ্য দ্বিতীয়ার্ধে মিলান সিংহ চেন্নাইয়িনের মাঝমাঠ বিকল না করতে পারলেও বিরক্ত করেছে বলাই বাহুল্য। সেটা কিছুটা সহজ হয়েছে মাঘমা মাঠের মাঝখানে চলে আসায়। মিলান সিংহ ইস্টবেঙ্গলের হয়ে আজ ওর সেরা ম্যাচটি খেললো।
ব্রাইটের উপর নিরন্তর ট্যাকটিক্যাল ফাউল চালিয়ে যাওয়া হয়েছে। সে বল ধরলেই দুই থেকে তিন জন তাকে ঘিরে ধরছিল। যার ফলে পিলকিংটন খুব সহজে বল পাচ্ছিলো না। পিলকিংটন বা ব্রাইট, কেউই সহজাত স্ট্রাইকার না হওয়ায় তারা বল ধরে বক্সে কারুকে পেলে স্বচ্ছন্দ বোধ করে। পিলকিংটন যেমন বক্সের একটু কোণার দিকে চলে যায়, তেমনি ব্রাইট বেশি ‘হোল্ড’ করে ফেলে। এদের থেকে কিন্তু প্রতি ম্যাচে গোল আশা করা অন্যায়। ব্রাইট প্রথম দু ম্যাচেই গোল পেয়েছে তার কারণ তখন তার খেলা বিপক্ষের কাছে অচেনা। এখন কিন্তু সব কোচ-ই প্রযুক্তির সাহায্যে খুব ভালো মতন হোম-ওয়ার্ক করে আসেন। আরন হামাদিকে এখনো বেশ আনফিট লাগছে। তার দৌড়ে গতি নেই।
শুধু শরীর-কেন্দ্রিক ফুটবল খেলেন। কোচের এই একটি খেলোয়াড় চয়ন নিয়ে প্রশ্ন উঠছে। যদিও ফাউলার কখনোই হামাদিকে স্ট্রাইকার পজিশনের জন্য এনেছেন বলে মনে হয়না। যদিও কিছু ইউটিউব চ্যানেলে তাকে স্ট্রাইকার বলে দাবি করা হয়েছিলো। যদি তার গোল করার পরিসংখ্যান দেখে অগুনতি সমর্থকের ভ্রুকুঞ্চিত হয়, কোচের কি সেটা নজর এড়িয়ে যাবে ? আরন এসেছে একদম প্রথমেই, আর সে যদি স্ট্রাইকার হয়েই আসে তবে ম্যানেজমেন্ট স্টোকস বা শেষ মুহূর্তে আপোয়েল -এ সই করা গার্নারের জন্য অপেক্ষা করবে কেন ? সবার শেষে আই এস এলে যোগ দেয়া ইস্টবেঙ্গলের খেলোয়াড় চয়নের সময় কিন্তু ফুটবলের হিসেবে উন্নত দেশ গুলোতে লীগ শুরু হয়ে গেছে। ফলে স্ট্রাইকার পাওয়া হয়ে উঠেছিল আরো দুষ্কর, বড়ো স্কোয়াডের অনুমতি থাকায় খেলোয়াড় বদলের শীতকালীন অধ্যায়টিও ক্লাবগুলোর জন্য কঠিন হয়ে পড়েছে, বিশেষ করে যখন অধিকাংশ দেশেই তিনটি করে লীগ এবং কাপ হয়। দেশীয় স্ট্রাইকারদের হয় আই এস এল ক্লাবগুলো ছাড়ছেনা অথবা তারা আই-লীগ ক্লাবগুলির দখলে।
স্ট্রাইকারের অভাব এস সি ইস্টবেঙ্গলকে ভোগাচ্ছে। কোচ অনেক পরিবর্তন এনেছেন, তৎসত্বেও বাকি সব পজিশনেই তুলনায় ভালো খেলোয়াড় আনতে পারলেও এই একটি জায়গায় পারেননি। সার্বিকভাবে কোচ এবং ম্যানেজমেন্টের চেষ্টার ত্রুটি ছিল কিনা জানা সহজ নয়। জিততে কে না চান। এই একটি খামতির জন্য তাকে কাঠগড়ায় তুলে মানসিক শান্তি পাওয়া যায় ঠিকই, তবে মনে রাখা ভালো ইস্টবেঙ্গলের বেঞ্চে ভালো বিকল্প খেলোয়াড় কিন্তু নেই; শুরু থেকেই ছিলোনা। অনেক পরিবর্তনের পরেও কোচের পরিকল্পনা চোট-আঘাত এবং দ্বাদশ ব্যক্তি নিয়মিত বিগড়ে দিচ্ছেন। আরবসাগরে লাল-হলুদের মশাল হয়ত লেলিহান নয়, কিন্তু নিভে যায়নি।
Related
Results
Club | Goals | Outcome |
---|---|---|
Chennaiyin FC | 0 | Draw |
SC East Bengal | 0 | Draw |
Details
Date | Time | League | Season | Full Time |
---|---|---|---|---|
January 18, 2021 | 7:30 pm | Indian Super League | 2020 | 90' |
Ground
GMC stadium Bambolim |
---|