পেইনের গাব্বায় অজিদের লজ্জায় ফেলে ঐতিহাসিক সিরিজ জয় ভারতের

Share

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp

[fblike]

বাংলায় একটা প্রচলিত কথা আছে “ওস্তাদের মার শেষ রাতে।” কথাটি যে খুব একটা ভুল নয় সেটা আজ ভারতীয় ক্রিকেট দলের জয় দেখেই বোঝা যাচ্ছে। সিরিজ শুরু হওয়ার আগে থেকেই যে তাবড় তাবড় ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরাও বলে দিয়েছিলেন যে অলৌকিক কিছু না ঘটলে সিরিজে একটাও ম্যাচ যেটা ভারতের জন্যে অসম্ভব, সেই বিশেষজ্ঞরাই আজ টুইটারে #গাব্বাটেস্ট দিয়ে ভারতের ঐতিহাসিক জয় নিয়ে টুইট করছেন, ভারতের জয়ের নেপথ্যে থাকা তরুণ গিল, পন্থদের বাহবা দিচ্ছেন।

অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে টেস্ট সিরিজ জয় যে ক্রিকেটে অন্যতম কঠিন কাজ সেটা বলাই বাহুল্য। তার ওপর দলের কিছু প্রথম সারির খেলোয়াড়দের বিভিন্ন কারণে চলে যাওয়ার পর কার্যত রিসার্ভ টিম থেকে তুলে এনে খেলানো হয় জনা কয়েক খেলোয়াড়দের। উল্লেখ্য, চোট আঘাতে জর্জরিত টিমে একমাত্র কার্তিক ত্যাগী ছাড়া বাকি সব খেলোয়াড় ম্যাচ খেলার সুযোগ পেয়েছেন। এরকম সময়ে ভারতীয় ক্রিকেটের সবথেকে বড় সমর্থকও হয়তো ভাবতে পারেননি এই তরুণ ব্রিগেডই তুরুপের তাস হয়ে উঠবে, আর নিজেদের মাটিতেই অস্ট্রেলিয়াকে চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দেবে ক্রিকেটটা ব্যাট বল দিয়ে খেলে, মুখ দিয়ে নয়।

একটু ফ্লাশব্যাকে যাওয়া যাক। এই এক মাস আগেই ১৭ই ডিসেম্বরে শুরু হয়েছিল বর্ডার-গাভাস্কার ট্রফির টেস্ট সিরিজ। প্রথম টেস্টের দ্বিতীয় ইনিংসে ব্যাটিং-ধসের শিকার হন ভারতীয় ক্রিকেটাররা, মাত্র ৩৬ রানে গুটিয়ে যায় তাদের যাবতীয় প্রতিরোধ। ৮ উইকেটে হেরে মুখে কালি লেগে যায় সবার, কারণ এটি ভারতের সর্বনিম্ন টেস্ট রান। পরবর্তী টেস্টে বিরাট থাকবেনা, সামির চোট, কিভাবে ঘুরে দাঁড়াবে ভারত? তখন হয়তো কেউ ভাবেননি টেস্টে এক নতুন তারকার উদয় হবে (শুভমান গিল) যিনি ওপেনার হিসেবে নিজের জায়গা সিরিজ শেষ হতে হতে পাকা করে ফেলবেন, একটি “আনসাং হিরো” হিসেবে প্রকট হবেন চেতেস্বর পূজারা নামের একটি খেলোয়াড়, নিজের বাবার শেষকৃত্যে না গিয়ে নিজের দেশকে ইতিহাসের পাতায় অমর করে রাখবেন কোনো এক মহাম্মদ সিরাজ।

স্মিথের উইকেট নেওয়ার পর সিরাজ। (© BCCI টুইটার)

দ্বিতীয় টেস্ট শুরু হওয়ার আগে যারা ইতিমধ্যেই অস্ট্রেলিয়াকে বিজয়ী ঘোষণা করে দিয়েছিল তারা দেখলো প্রথম ইনিংসে মাত্র ১৯৫ রানে গুটিয়ে গেলো অস্ট্রেলিয়া, আর ১৩০ রানের লিড নিয়ে খুব সহজেই ম্যাচটা জিতে ঘুরে দাঁড়ালো ভারত। অধিনায়ক কথাটির যথেষ্ট মর্যাদা রেখে প্রথম ইনিংসে ১১২ রান করে গেলেন অজিঙ্ক রাহানে, আর টেস্টে অভিষেক করা শুভমান গিল নিজের দুটো ইনিংসে করলেন ৪৫ এবং ৩৫* রান। খুব সহজেই সিরিজে ১-১ ব্যবধানে ফিরে এসে এবার পালা ছিল সিডনিতে সিরিজে লিড নেওয়ার।

কিন্তু অস্ট্রেলিয়াতে তাদেরকেই কতক্ষন চুপ করে রাখা যায়? প্রথম ইনিংসে ৯৪ রানের লিড নিয়ে ভারতের ওপর পাহাড়ের সমান টার্গেট রাখে ক্যাঙ্গারু-বাহিনী। প্রথম ইনিংসে জাদেজার ব্যাট না চললে টার্গেটটা আরও বেশি হতে পারতো। তবে শেষ বেলায় দুই আহত যোদ্ধা, অশ্বিন ও হনুমা বিহারীর ব্যাটের ওপর ভর করে হারের লজ্জা এড়ায় ভারত। ২৪৬ বল খেলে ৫০ রানের একটি পার্টনারশিপ উপহার দেন বিহারী এবং অশ্বিন, তবে যেই কথাটা না বললে হয়না, গ্রেড ২ হ্যামস্ট্রিং ইনজুরি নিয়ে সারাদিন দাঁতে দাঁত চিপে লড়াই করে গেছিলেন বিহারী, আর আগের রাতে পিঠের যন্ত্রনায় ঘুমাতে না পারা অশ্বিনও অস্ট্রিলিয়ান বোলারদের নাস্তানাবুদ করে ছেড়েছিলেন।

আহত অবস্থাতেও লড়ে গেছিলেন বিহারী ও অশ্বিন। (© BCCI টুইটার)

তার পরেই আসে ঐতিহাসিক ভেন্যু, গাব্বা। ১৯৮৮ এর পর এই মাঠে অস্ট্রেলিয়া কে কোনো দল হারাতে পারেনি, তাই একটু বেশি আত্মবিশ্বাস নিয়েই মাঠে নেমেছিলো টিম পেইনের দল। জাদেজা, অশ্বিন ও বুমরা শেষ মুহূর্তে ছিটকে যাওয়ায় নবাগত শারদুল ঠাকুর, নাভদীপ সাইনি ও ওয়াশিংটন সুন্দরদের দিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজান রাহানে। প্রথম ইনিংসে লাবুশেনের সেঞ্চুরির ওপর ভর করে ৩৬৯ রান তোলেন অজিরা। জবাবে শুরুতেই শুভমানের উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় ভারত। রোহিত শর্মা কিছুটা প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করলেও অযথা নিজের উইকেট উপহার দিয়ে আসেন মাঠে। ১৯০ রানের নিচে ৬ উইকেট পরে যাওয়ায় এক সময় চাপে পড়ে যায় ভারত, আর সেখান থেকে তাদের উদ্ধার করেন ওয়াশিংটন সুন্দর ও শারদুল ঠাকুর। যথাক্রমে ৬২ ও ৬৭ রানের দুটো অনবদ্য ইনিংস খেলে তারা মাত্র ৩৩ রানের লিড নিতে দেন অজিদের।

প্রথম ইনিংসে অনবদ্য ওয়াশিংটন ও শারদুল। (© BCCI টুইটার)

দ্বিতীয় ইনিংসে বল হাতে ঝলসে ওঠেন মোহাম্মাদ সিরাজ ও শারদুল ঠাকুর। তারা যথাক্রমে ৫ ও ৪ উইকেট নিয়ে ২৯৪ রানে গুটিয়ে দেন অস্ট্রিলিয়ার ইনিংস। ৩২৮ রান চেজ করতে নেমে ৯১ রানের একটা সুন্দর ইনিংস খেলে জেতার ভীত গড়ে দিয়ে যান শুভমান গিল। নাথান লিওনের অফস্টাম্পের বাইরের বলে খোঁচা না মারতে গেলে নিজের কেরিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরিটা পেয়ে যেতেন তিনি। গিলের গড়ে দেওয়া ভিতকে আরো শক্তিশালী করেন পূজারা। ধৈর্য ধরে ২০০ বল খেলে নিজের অর্ধশতরান পুরো করেন তিনি। তবে ৫৬ রানে তাকে প্যাভিলিয়নে পাঠিয়ে দেন প্যাট কামিন্স। তার পর আর সেভাবে মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। রিশভ পন্থের ৮৯* রানের সুবাদে ৩ ওভার বাকি থাকতেই জয়ের দোরগোড়ায় পৌঁছে যায় ভারত, তাকে মাঝে ভালো সঙ্গত দেন ওয়াশিংটন সুন্দর (২৯ বলে ২২ রান)।

এই জয়ের সুবাদে টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের টেবিলে শীর্ষ স্থানে উঠে আসলো ভারত, দ্বিতীয় স্থানে আছে নিউজিল্যান্ড। উল্লেখ্য, গাব্বায় ৩২ বছর পর অস্ট্রেলিয়াকে হারানোর থেকেও বড়ো যে কারণে এই টেস্ট ভারতের ইতিহাসে অমর হয়ে থাকবে (বিশেষত অশ্বিনের কাছে) সেটা হলো খোদ অজি ক্যাপ্টেন টিম পেইন অশ্বিনকে তৃতীয় টেস্টে বলেছিলেন, “তুমি গাব্বায় এসো, তার পর দেখবো।” অশ্বিন চোটের কারণে গাব্বায় না খেলতে পারলেও তার টিম কিন্তু পেইনকে তার হয়ে যোগ্য জবাবটা দিয়ে গেলো।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.