জেতার জন্যে মাঠে সর্বস্ব দিয়ে এসেও হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে জয় অধরা রইলো ইস্টবেঙ্গলের। ব্রাইটের করা অসাধারণ গোলের ব্যবধানকে ধরে রাখতে ব্যর্থ হলো লাল হলুদ ডিফেন্স। সংযুক্ত সময়ের প্রথম মিনিটেই ইস্টবেঙ্গল ডিফেন্সের গড়িমসির ফায়দা নিয়ে খালি গোলে বল ঠেলে নিজের দলের জন্যে মূল্যবান ১ পয়েন্ট তুলে নেন অধিনায়ক সান্তানা।
তবে টনি গ্রান্ট ও ম্যানুয়েল মার্কেজের মগজ-লড়াইয়ে লেটার মার্ক্স নিয়ে পাস করলেন ইস্টবেঙ্গলের সহকারী। শুরু থেকে হায়দ্রাবাদের প্রাণ ভ্রমরা আরিদানে সান্তানাকে রুখতে জোনাল কভারিঙ ব্যবহার করেন গ্রান্ট। জামশেদপুরের বিরুদ্ধে যেই ৩ জনকে ডিফেন্সে নিয়ে দল সাজিয়েছিলেন, সেই ফক্স, রাজু ও সার্থকদের দিয়েই আরিদানেদের রোখার পরিকল্পনা করেন তিনি। মূলতঃ রাজুর দায়িত্ব ছিল ডিপ ডিফেন্সে আরিদানেকে খোলা জায়গা না দেওয়া। আক্রমণের সময়ে দুই সেন্টার ব্যাক ফক্স ও সার্থক ওভারল্যাপ করলে সৌরভ নীচে নেমে আসছিলেন যাতে মাঝমাঠ ও আরিদানের মধ্যে সম্পর্ক ছিন্ন থাকে।
তাই শুরু থেকেই হায়দ্রাবাদের কাছে দূর থেকে শট নেওয়া ছাড়া আর কোনো উপায় ছিলোনা। ফলস্বরূপ আরো স্বাধীনতার সাথে খেলতে পারছিলেন সৌরভ স্টেইনম্যানরা। স্কোয়ের পাস ও ডায়াগোনাল পাসিংয়ে মুহুর্মুহু আক্রমণ তৈরি করে ইস্টবেঙ্গল, তবে ফিনিশিং আর ফাইনাল থার্ডের কার্যকরিতার অভাব ভোগায় তাদের। ইতিমধ্যেই লীগ টেবিলে চতুর্থ স্থানাধিকারী হায়দ্রাবাদও প্ল্যান বি নিয়ে আক্রমণ তৈরি করে, যেখানে দুই সাইড ব্যাক আকাশ মিশ্র ও আশিস রাই ওভারল্যাপ করার বদলে ভেতরে জায়গা খুঁজতে থাকেন। এর সুবাদে একবার সুব্রতকে একা পেয়ে যান হায়দ্রাবাদের এক খেলোয়াড়, তবে সুব্রত অনবদ্য ভাবে দলকে পতনের মুখ থেকে উদ্ধার করেন। প্রথমার্ধের শেষ লগ্নে পিলকিংটনের দূরপাল্লার শট বাঁচান কাট্টিমানি।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকে আরো আক্রমণাত্মক মেজাজ নিয়ে খেলা শুরু করে লাল হলুদ ব্রিগেড। এই সময়ে ডিফেন্সকে একজোট করে কাউন্টার এটাকে যাওয়াই মূল লক্ষ্য ছিল ব্রাইটদের। মাঘমা ও স্টেইনম্যান আরেকটু ডিপ রোলে খেলা শুরু করলে হায়দ্রাবাদ নিজেদের ডিফেন্স লাইন আরো এগিয়ে দেয়, যার ফলে কাউন্টার এটাকে সুবিধা হয় ইস্টবেঙ্গলের। ফলস্বরূপ খেলার প্রথম গোলটিও একটি অনবদ্য কাউন্টার এটাকের সৌজন্যে পায় ইস্টবেঙ্গল। অঙ্কিতের ক্লিয়ার করা বলকে মাথা দিয়ে আলতো ফ্লিক করে নো ম্যান্স জোনে ফেলে পিলকিংটন, যেই বল ধরে দুই-তিন হায়দ্রাবাদ খেলোয়াড়দের ডজ করে আবারো একটি অনবদ্য গোল উপহার দেন ব্রাইট।
এর পর আক্রমণের ঝাঁঝ বাড়ায় হায়দ্রাবাদ। কিছুক্ষনের জন্যে ইস্টবেঙ্গলের সমস্ত প্রতিরোধ কার্যত কোনো কাজে লাগছিলোনা। খেলার ৭০ মিনিটের মাথায় গোল করেন সান্দাজা যেটা অফসাইডের জন্যে বাতিল করেন সহকারী রেফারি। এর পর বক্সের ভেতরে একটি ৫০-৫০ চ্যালেঞ্জ করে বসেন সার্থক গলুই, যেটা রেফারির মতে কোনো ভাবেই পেনাল্টি ছিলোনা। গোল করতে মরিয়া হায়দ্রাবাদ তখন যেখান থেকে পারছে শট নিচ্ছে, কিন্তু কাজের কাজটি আর হচ্ছিলোনা।
খেলার অন্তিম লগ্নে আমাদী মাঠে নামার পর আবারো একটি পেনাল্টির আবেদন আসে রেফারির কাছে, তবে এই বার ঘটনাটি ঘটে হায়দ্রাবাদের পেনাল্টি বক্সে। আমাদির বাড়ানো বল নিয়ে যখন ব্রাইট গোলকিপারকে কাটাতে যান তখন কোনো ভাবে কাট্টিমানির পায়ের সংস্পর্শে এসে ব্রাইট পড়ে যান, তবে টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার বোঝা যায়নি ওটা আদেও পেনাল্টি ছিল কি না। তবে রেফারির মান যে আইএসএলে একদমই ভালো নয় সেটা আবার প্রনানিত হলো এই ম্যাচে। সংযুক্ত সময়ের প্রথম মিনিটে ডিফেন্সের ক্লিয়ার করার ভুলকে কাজে লাগিয়ে গোল শোধ করেন আরিদানে, যেটা আবার দেখিয়ে দিল অন্তিম লগ্নে মাঝেমধ্যেই সুইচ অফ হয়ে যাচ্ছে লাল হলুদ বাহিনী।
এই ড্র এর ফলে লীগ টেবিলে কেরালাকে পিছনে ফেলে ৯ নম্বরে উঠে আসলো ইস্টবেঙ্গল, অপর দিকে চতুর্থ স্থানেই রইলো হায়দ্রাবাদ, তবে পঞ্চমে থাকা নর্থইস্টের থেকে এক ম্যাচ বেশি খেলে এক পয়েন্টের ব্যবধানে এগিয়ে রইলো তারা। আগামী রবিবার ডার্বির আগে জামশেদপুর এবং হায়দ্রাবাদ ম্যাচের প্রদর্শন দেখে বেজায় খুশি হবেন গ্রান্ট, কারণ ছেঁড়া কাথায় স্বপ্ন দেখে তা বাস্তবায়িত করতে শুরু করেছে লাল হলুদ যোদ্ধারা। হ্যাঁ, দ্বিতীয় স্থানে থাকা এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে লড়াই আর সাত পাঁচটা ম্যাচের মতো না হলেও বড় ম্যাচের গুরুত্ব বুঝতে বাকি নেই ফক্স মাঘমাদের।