গত ম্যাচে অবিশ্বাস্য আত্মঘাতী গোল করে শিরোনাম তৈরি করেছিলেন উনাই সিমন (Unai Simón), আর আজ সেই উনাই সিমন না থাকলে সেমিফাইনালের দরজা বন্ধ হয়ে যেত স্পেনের জন্যে। পেনাল্টি শুটআউটে দুটো শট বাঁচিয়ে এখন লা রোহা (La Furia Roja) ফ্যানদের নয়নের মণি আতলেতিকো বিলবাওয়ের (Athletic Bilbao) গোলকিপার উনাই সিমন। এক্সট্রা টাইমের পরেও খেলা ১-১ থাকায় টাইব্রেকারে গড়ায়, যেখানে ৩-১ ব্যবধানে সুইজারল্যান্ডকে হারিয়ে ইউরো কাপের (UEFA EURO 2020) সেমিফাইনালে পৌঁছে গেল স্পেন।
২০১২ ইউরো কাপের পর এই প্রথম কোয়ার্টার ফাইনালে উত্তীর্ণ হয়েছিলো স্পেন (Spain national football team)। দীর্ঘ ৯ বছর পর আবারও ট্রফি জেতার হাতছানি স্পেনের সামনে। ক্রোয়েশিয়াকে (Croatia national football team) ৫-৩ গোলে হারানো দলে দুটো পরিবর্তন করেন লুইস এনরিকে। লেফট ব্যাকে গায়ার (José Gayà) জায়গায় দলে ফেরেন জোর্ডি আলবা (Jordi Alba)। সেন্টার ব্যাকে লাপোর্তের (Aymeric Laporte) সাথে শুরু করেন পাউ তোরেস (Pau Torres)।
খেলা শুরু হওয়ার ৭ মিনিটের মাথায় এগিয়ে যায় স্পেন। জোর্ডি আলবার বক্সের বাইরে থেকে নেওয়া শট জাকারিয়ার পায়ে লেগে দিক পরিবর্তন করে জালে জড়িয়ে যায় (১-০)। সেই মুহূর্তে খেলার চরিত্র দেখে মনে হচ্ছিল আজ আবার বড় গোলপার্থক্য নিয়েই মাঠ ছাড়বে লুইস এনরিকের (Luis Enrique) ছেলেরা।
তবে গোলটি হওয়ার পর স্পেনের আক্রমণের তেজ খানিকটা কমে যায়, অপর দিকে সদ্য টুর্নামেন্ট ফেভারিট ফ্রান্সকে (France national football team) হারিয়ে তেতে থাকা সুইজারল্যান্ড (Switzerland national football team) গোল শোধ করতে মরিয়া হয়ে ওঠে। তবে প্রথমার্ধে এক গোলের লিড নিয়েই মাঠ ছাড়ে স্পেন।
দ্বিতীয়ার্ধে আক্রমণের ঝাঁজ বাড়ায় সুইজারল্যান্ড। আর্সেনাল (Arsenal F.C.) তারকা জাকার (Granit Xhaka) অবর্তমানে আজ অধিনায়কের দায়িত্ব পালন করেন জার্দান শাকিরি (Xherdan Shaqiri), এবং তাঁর পা থেকে আসা গোলেই ম্যাচে সমতা ফেরায় সুইজারল্যান্ড। বল ক্লিয়ার করতে গিয়ে পাউ তোরেসের গায়ে বলটি মারেন লাপোর্তে, এবং সেই ডিফেন্সিভ ভুলের খেসারত দিতে হয় স্পেনকে। ফ্রয়েলারের (Remo Freuler) থেকে পাস থেকে ঠান্ডা মাথায় স্পেনের জালে বল জড়াতে ভুল করেননি লিভারপুলের (Liverpool F.C.) তারকা শাকিরি (১-১)।
যখন মাঠে একতরফা দাপট দেখানো শুরু করতেই যাচ্ছিল সুইজারল্যান্ড, ঠিক তখনই ৭৭ মিনিটের মাথায় লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়েন ফ্রয়েলার। ১০ জন হয়ে গিয়ে সুইজারল্যান্ডের প্রধান লক্ষ্য হয়ে যায় ম্যাচকে টাইব্রেকার অব্দি নিয়ে যাওয়া, এবং ঠিক সেই কারণেই ডিফেন্সে লোকসংখ্যা বাড়াতে থাকে তাদের কোচ। এমনকি তাঁদের তারকা ফুটবলার শাকিরিকেও তুলে নিতে বাধ্য হন ভ্লাদিমির পেটকোভিচ (Vladimir Petković)।
এরই মধ্যে যে কথাটি বললে নয়, সেটি হলো আজ সুইস গোলরক্ষক ইয়ান সোমারের (Yann Sommer) খেলা। স্পেনের সব আক্রমণ একই জায়গায় এসে থামছিলো বারবার, ইয়ান সোমারের বিশ্বস্ত হাত! এক্সট্রা টাইম নিয়ে মোট ৪০ মিনিটেও ১০ জনের সুইজারল্যান্ডের বিরুদ্ধে গোল করতে পারেনি স্পেন, কার্যত ৬-৭ বার একার হাতে দলের পতন রোধ করেন সুইজারল্যান্ডের এই অভিজ্ঞ কিপার। অতিরিক্ত সময়ের শেষের দিকে মাইকেল ওয়ার্যাবলের (Mikel Oyarzabal) গোলমুখী দুটো শট অসম্ভব ক্ষিপ্রতায় শূন্যে শরীর ছুঁড়ে বাঁচান তিনি।
পেনাল্টি শ্যুটআউটে ম্যাচ গড়ায় যখন, তখন সাম্প্রতিক ইতিহাস সুইজারল্যান্ডের পক্ষে। শেষ ৫ টি পেনাল্টিতে গোল করতে ব্যর্থ স্পেন, অপর দিকে টাইব্রেকারে ৫টি পেনাল্টি গোল করে ফ্রান্সকে হারিয়ে এই ম্যাচ খেলতে নেমেছিল সুইজারল্যান্ড। এমনকি প্রথম কিক নিতে এসে মিস করেন স্পেনের অধিনায়ক সার্জিও বুস্কেটসও (Sergio Busquets)।
এর পরেই নিজের জাত চেনান উনাই সিমন। চাপের মুখে ফাবিয়ান শার (Fabian Schär) এবং ম্যানুয়েল আকানজির (Manuel Akanji) পেনাল্টি বাঁচিয়ে স্পেনকে লাইফলাইন দেন তিনি। যদিও স্পট থেকে মিস করেন রোদ্রি-ও (Rodri), তবে গোলের নিচে দুর্ভেদ্য উনাই সিমনের জন্য চাপ বাড়ে সুইস খেলোয়াড়দের ওপর, এবং তাদের চতুর্থ পেনাল্টি তিনকাঠির মধ্যেই রাখতে পারেননি ভারগাস (Ruben Vargas)। শেষ পেনাল্টি থেকে গোল করে স্পেনকে সেমিফাইনালে তোলেন মিকেল ওয়ার্যাবাল। সেমিফাইনালে স্পেনের প্রতিপক্ষ বেলজিয়ামকে হারিয়ে উঠে আসা ইতালি (Italy national football team)।