ISL 2021-22: চেন্নাইন এফসির বিরুদ্ধে দুরন্ত কামব্যাকে পুরোনো ইস্টবেঙ্গলের ছোঁয়া

Share

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp

[fblike]

ইস্টবেঙ্গল লড়াই করতে, ফিরে আসতে ভুলে যায়নি।

‘লড়াই করার আরেক নাম ইস্টবেঙ্গল’ , ‘বাঙালরা হারার আগে হার মানে না’ এই সমস্ত প্রবাদ বাক্যগুলিতে ধুলোর মোটা প্রলেপ পড়ে যাচ্ছিলো।

এটিকে মোহনবাগানের (ATK Mohunbagan) বিরুদ্ধে হারের পর ইস্টবেঙ্গল (SC Eastbengal) সমর্থকদের বুকের ভিতর এমনিতেই দমবন্ধ পরিস্থিতি। তার উপর হঠাৎ করে ক্লাব কর্তারা আই এস এল (ISL) খেলার বিষয়ে অনীহা প্রকাশ করে লাল-হলুদ সমর্থকদের অস্বস্তি বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। ক্লাবের ভবিষ্যতের প্রশ্ন, রাজনৈতিক হস্তক্ষেপ এবং অর্থনৈতিক জটিলতা উপেক্ষা করে জয় না হোক, একটি পয়েন্ট অন্তত আসুক সেই আশায় দিনের পর দিন খেলা দেখতে বসে হাজার হাজার সমর্থক।

দেড় মিনিটের কম সময়ে হীরা মন্ডলের (Hira Mondal) পায়ে লেগে প্রথম গোলের পরেই চোদ্দ মিনিটের মাথায় আবার হীরার ভুল পাস থেকেই বল ধরে নিন্থই মিতেই (Ninthoi Meetei)-এর একক দক্ষতায় করা দ্বিতীয় গোলের পর মনে হচ্ছিলো খেলার শেষ এখানেই। নিন্থই -এর এটাই এই এস এলে প্রথম গোল। তার শটের গতির নাগাল পাননি অরিন্দম ভট্টাচার্য্য (Arindam Bhattacharya)। প্রথমার্ধে চেন্নাইয়িন এফ সির দাপট ছিল প্রশ্নাতীত। লাল-হলুদের সবচেয়ে ধারাবাহিক খেলোয়াড় হীরার আজ অফ-ফর্ম ছিল। আর ডান প্রান্তে খেলা অমর্জিতের সিং-এর (Amarjit Singh Kiyam) যেহেতু একটি সাইড -ব্যাকের স্বাভাবিক গতিটা নেই দুই পাশ থেকে মুহুর্মুহু আক্রমণ শানাচ্ছিলো মেরিনা মাচান্সরা (Marina Machans)। আই এস এল ২০২২-এ সবচেয়ে কম ১৪টি গোল করেছে টেবিলের ছয় নম্বরে থাকা চেন্নাইয়িন। ইস্টবেঙ্গল তাদের থেকেও দুটি বেশি গোল করে ফেলেছে।

জামশেদপুর এফ সি (Jamshedpur FC) থেকে তার পুরোনো ক্লাবে ফিরেও এখনো গোল না পাওয়ায় বেশ চাপে নেরিযুস ভালস্কিস (Nerijus Valskis)। ভয়ংকর অফ-ফর্মে থাকা ব্যারাকপুরের রহিম আলীর (Rahim Ali) জায়গায় শুরু করেন ২২ বর্ষীয় অনভিজ্ঞ সুহেল পাশা (Syed Suhail Pasha)। ফলে ধীরে ধীরে ধার কমতে থাকে চেন্নাইয়িনের রক্ষণের। ব্যান্ডভিচ (Božidar Bandović) দ্বিতীয়ার্ধে লুকাস (Łukasz Gikiewicz) এবং মুরজায়ীভকে (Mirlan Murzaev) এনেও বিপক্ষ শিবিরে চাপ সৃষ্টি করতে পারেননি। উল্টে খেলার সম্পূর্ণ দখল নিয়ে নেয় ইস্টবেঙ্গল।

মারিও রিভেরার (Mario Rivera) কৌশল ছিল বক্সের আশেপাশে বল পেলেই শট নাও। আই এস এলের ইতিহাসে ইস্টবেঙ্গল আজ গোলমুখী সর্বোচ্চ শট নিয়েছে। বিশেষ করে দুই গোলে পিছিয়ে থেকেও প্রথমার্ধে সর্বোচ্চ শটের রেকর্ডটি বানায় লাল-হলুদ। এর ফলে চেন্নাইয়িনের রক্ষণ ভাগ খেলার ত্রিশ মিনিটের পর থেকে আর নির্ভয়ে উঠে আসতে পারেনি। চেন্নাইয়িনের আক্রমণ ভাগের দুর্বলতার পাশে আরো একটি বিষয় নজরে পড়ে। আদিল খান (Adil Khan) উড়ে আসা বলে দক্ষ ওনার প্রধান দুর্বলতা হলো বারবার শরীর ছুড়ে দিয়ে ফাইনাল ট্যাকেলে যাওয়া। যেটা তার স্বাভাবিক পজিশন সেন্ট্রাল ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার হিসেবে চললেও, সেন্টার ব্যাক হিসেবে আত্মঘাতী হয়ে দাঁড়ায় অধিকাংশ ক্ষেত্রে। কারণ আক্রমণকারী বক্সের ভিতর বা আশেপাশে প্রচুর জায়গা পেয়ে যায়। আজকের ম্যাচে আদিল খানকে এরকম ভুল করতে দেখা যায়নি।

অরিন্দমের রিফ্লেক্স দুর্বল। তার উপর শরীর ভারী হয়ে যাওয়ায় তিনি শরীর ছুঁড়ে বলের গতিপথের পিছনে পৌঁছতে পারছেন না। আত্মবিশ্বাসে ঘাটতি পড়ায় ছয় গজের বক্সের ভিতর তার গতিবিধি সাবলীল নয়। অথচ তার জায়গায় পরিবর্ত গোলকীপারদের উচ্চতা আই এস এলের বিদেশী স্ট্রাইকারদের উচ্চতার নিরিখে বেশ খাটো হওয়ায় সমস্যা আরো বাড়ছে। সবাই দেবজিৎ মজুমদার (Debjit Majumder) হয়না যে রিফ্লেক্স দিয়ে উচ্চতার অভাব ঢেকে দেবে।

চোট সরিয়ে ফেরা অঙ্কিত মুখার্জীর (Ankit Mukherjee) আবার চোট পাওয়াটা লাল-হলুদ রক্ষণে বিলক্ষণ অস্বস্তি বাড়িয়েছে। আজ প্রথমবার ইস্টবেঙ্গল জার্সিতে মাঠে নাম নাওচা সিংহ (Naocha Huidrom Singh) কতটা সামাল দেন সেটা দেখার। যদিও মজার ব্যাপার হলো স্বাভাবিক রাইট ব্যাক নাওচা খেলেন বামদিকে, আর স্বাভাবিক লেফ্ট ব্যাক হীরা চলে যান ডান প্রান্তে। আশ্চর্য্য ভাবে বলের উপর খুব ভালো নিয়ন্ত্রণ না থাকা সত্বেও কোচ হীরাকে দ্বিতীয়ার্ধে বেশ খানিকটা উপরে ঠেলে দেন, এবং প্রথম গোল করার পরেই ড্যারেন সীডেলকে (Darren Sidoel) নিয়ে আসেন রক্ষণভাগে। আর মাঠের মাঝখানে আঙুসানার (Wahengbam Angousana) অক্লান্ত পরিশ্রম করার ক্ষমতা রক্ষণকে কতটা নির্ভরতা দেয় সেটা প্রমাণিত হয় হায়দ্রাবাদ (Hyderabad FC) ম্যাচে তাঁর অনুপস্থিতিতে।

লাল-হলুদের আক্রমণভাগ পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে মার্সেলো (Marcelo Ribeiro dos Santos) আসায় বিপক্ষ বক্সে একটা ত্রাসের সৃষ্টি হচ্ছে। বেশ কয়েকবার গোল করার খুব কাছাকাছি পৌঁছে যাচ্ছেন ২৪ বছর বর্ষীয় এই ব্রাজিলীয় ফরওয়ার্ড। কিন্তু পেরোসেভিচ (Antonio Perošević)-এর প্রবণতা হচ্ছে হয় ডান দিকের কর্নার ফ্ল্যাগের দিকে দৌড়োনো অথবা ডান দিক থেকে রক্ষণ ভেদ করে ঢুকে গোলমুখী জোরালো শট নেওয়া। ফলে এই দুজনের মধ্যে দূরত্ব থেকে যাচ্ছে এবং এখনো বোঝাপড়ার অভাব আছে। নাওরেম মহেশ (Naorem Mahesh Singh) বাম দিকের খেলোয়াড় হওয়া সত্বেও ইস্টবেঙ্গল মাঝমাঠে কোনো দশ নম্বর পজিশনের খেলোয়াড় না থাকায় আর পেরোসেভিচ ডান উইং ধরে খেলায় সচ্ছন্দ বোধ করায় ইস্টবেঙ্গল আক্রমণের সময় মাঠের বামপ্রান্তটি বেশ অচল থাকে।

জ্যাকিচাঁদ সিংহকে (Jackichand Singh) কোনো কোচ-ই খেলতে পারছেন না, বিকাশ জাইরুর (Bikash Jairu) অবস্থাও তথৈবচ। ফ্র্যান সোটা (Fran Sota) আসায় সমস্যার সাধন হবে কিনা সেটা সময়-ই বলবে, তবে তাঁর মিনিট ষোলোর খেলা দেখে আশায় বুক বাঁধতে পারেন সমর্থকরা। সীডেলের করা দুর্ধর্ষ ফ্রি-কিক থেকে প্রথম গোল এবং তাঁর সর্বোপরি পারফরম্যান্স তাঁকে ম্যাচের সেরা খেলোয়াড় নির্বাচিত করলেও আক্রমণ মনস্ক কোচ পরবর্তী খেলায় তাঁকে নিয়ে শুরু করেন কিনা দেখার।

হীরার হ্যামস্ট্রিং-এর চোট চিন্তাজনক হলেও সুখবর হলো টোমিস্লাভ মার্সেলার (Tomislav Mrčela) সুস্থ হয়ে বেঞ্চে ফিরে আসা। আগের কোচদের পরিচালনায় আঠেরো বছরের কিশোর লালরিনলিয়ানা নামতে (Lalrinliana Hnamte) শুরু থেকে নামলেও, মারিও ওকে পরিবর্ত হিসেবে নামিয়ে একটা চোরা গতির স্রোত আনবার চেষ্টা করছেন মাঝমাঠে। আগের ম্যাচে এহেন পরিকল্পনা সাফল্যের খুব কাছ থেকে ফিরে এলেও, এই ম্যাচে তিনি নিরাশ করেননি। ৯১ মিনিটে শরীর ছুঁড়ে হেড দিয়ে তার করা প্রথম গোল লাল-হলুদ জনতা মনে রাখবে বহুদিন।

সুপার মারিওর (Super Mario) প্রথম ম্যাচে এফ সি গোয়ার (FC Goa) বিরুদ্ধে পড়ে পাওয়া চোদ্দ আনার মতো অপ্রত্যাশিত জয়ের পরেই, হায়দ্রাবাদের বিরুদ্ধে বেশ ভালো ফুটবল খেলেও চার গোলে পরাজয়। পরের ম্যাচেই ডার্বি (Kolkata Derby)। মারিও ডার্বির গুরুত্ব জানেন। প্রবল পরাক্রমী এটিকে মোহনবাগানের বিরুদ্ধে তার কৌশল এবং মাঠে ছেলেদের লড়াই ভেঙ্গে পড়ে ম্যাচের অতিরিক্ত সময়ের খেলায়। ফিরে আসার সময় ছিলোনা। আজ উনি দেখালেন ইস্টবেঙ্গল ফিরে আসতে ভুলে যায়নি।

ইস্টবেঙ্গল লড়াই করতে জানে, আর মারিও লড়াই করার তাগিদটাকে ইন্ধন দিতে জানেন। স্কোর যাই হোক না কেন। ধুলোর প্রলেপ সরছে, সামনে খোলা উপেক্ষিত টিভির দিকে চোখগুলো ফিরছে, সব দিনের লড়াই বৃথা যায় না যে। তবে, আমাগো ক্লাবের (Amago Club) সমর্থকদের বুকের ক্ষত সারছে কি? তার খোঁজ লগ্নিকারী বা কর্মকর্তা কেউ নিতে চায়না। ছিলাম, আজও আছি, তবে থাকবো কি? তার খোঁজ লগ্নিকারী বা কর্মকর্তা কেউ দিতেও চায় না।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.