নাম তার বরিশাল

Share

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp

[fblike]

ধান, নদী, খাল—এই তিনে বরিশাল, কিংবা আইতে শাল, যাইতে শাল, তার নাম বরিশাল। নদীর দেশ, কবির দেশ বরিশাল। চারণকবি মুকুন্দ দাশ থেকে শুরু করে রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ, কুসুমকুমারী দাশ, সুফিয়া কামাল, কামিনী রায়, আসাদ চৌধুরী, মোজাম্মেল হক সবাই এই এলাকার সন্তান। মাধব পাশা এলাকা ছিল বাকলা চন্দ্রদ্বীপ রাজাদের আবাসস্থল। এই কারণে বরিশাল চন্দ্রদ্বীপ নামেও আগে পরিচিত ছিল। যদিও বরিশাল নামকরনের নানা মতভেদ আছে। কারো মতে অনেক আগে এখানে খুব বড় বড় শাল গাছ জন্মাতো, বড়+শাল মিলে বরিশাল নামের উৎপত্তি। আবার কারো মতে পর্তুগীজ বেরি ও শেলির প্রেমকাহিনীর জন্য বরিশাল নামকরণ হয়েছে। আরও একটি মত হল, ইংরেজ ও পর্তুগীজ বণিকরা বড় বড় নুনের চৌকিকে ‘বরিসল্ট’ বলতো। পরবর্তিতে বরিসল্ট শব্দটি পরিবর্তিত হয়ে বরিশাল নামে পরিচিতি লাভ করে।

কীর্তনখোলা নদীর তীরে অবস্থিত এই শহরকে প্রাচ্যের ভেনিসও বলা হয়। এ ভেনিস ভোরের বাতাসে কাঁঠাল পাতার ঝরে যাওয়া, লক্ষ্মীপেঁচার গান, ধানসিরি নদীটির তীরে শঙ্খচিল শালিখের ভীড়ে, নরম ধানের গন্ধ, শাপলার রাজ্য, নদী-মাটির ভালবাসার দেশ, বাংলা ভাষার দেশ। পাশ্চাত্যের সাজানো গোছানোর ব্যাপার নেই, এখানে প্রকৃতি তার আপন খেয়ালে নিজের হাতে গড়ে প্রাকৃতিক বৈচিত্রে সাজিয়ে তুলেছে। যেদিকে চোখ যায়, সকালের নরম রোদে স্নিগ্ধ সবুজের সমারহকে অসংখ্য খাল জ্যামিতিক ভাবে রেখা টেনে ভাগ করে গেছে। প্রতিবেশী দুটি বাড়ির মাঝে কোথাও একটি সরু নালা কোথাও বা বড় খাল এখানে পাঁচিলের কাজ করছে। গ্রামের ভেতরে একটি মাত্র সরু ইঁটের রাস্তার সাথে গ্রামের যেকোন বাড়ির যোগসূত্র স্থাপন করেছে হয় জলের ওপর দিয়ে সুপুরি গাছ বা বাঁশ বা অন্য কোন গাছের কাণ্ড বা ডাল দিয়ে সরু এক চিলতে সাঁকো, অথবা ছোট-বড় নৌকা। বরিশালের জনজীবনের সাথে জড়িয়ে আছে জল; জলপথ – এখানকার প্রধান যোগাযোগ মাধ্যম। হাট-বাজার-ঘর-বাড়ি-ব্যবসা-জীবিকা সবকিছু নদী আর খাল নির্ভর। আইতে শাল যাইতে শাল, তার নাম বরিশাল। প্রবাদটি আমরা সবাই কম বেশি শুনেছি। বরিশাল নিয়ে কথা হলেই আমরা এই প্রবাদটি প্রায় বলে থাকি। বর্ষায় নদীপ্রধান বরিশাল এতই জলময় হয়ে যায়, আসা যাওয়া করতে শালতি বা ছোট নৌকা ছাড়া উপায় থাকত না এককালে। কিন্তু লোকের মনে এই শাল হয়ে গেছে শালগাছের প্রতীক/ কারণ বরিশালিরা এতই একরোখা হন।

বরিশাল এসে কবি জীবনানন্দের স্মৃতির সাথে সাক্ষাৎ না করে বরিশাল দর্শন অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। কিন্তু বগুড়া রোডের কবির জন্মভিটে তে গেলে সম্পূর্ণ হতাশ হতে হবে। আদিবাড়ির দুটো পিলার আর ‘ধানসিঁড়ি’ লেখাটুকু ছাড়া আর কোন কিছুই অবশিষ্ট নেই। রূপসী বাংলার জনকের পৈতৃক বাড়ির যায়গায় ঝাঁ-চকচকে আবাসন গড়ে উঠেছে। কবির জন্মস্থানের ঠিক পাশেই অবস্থিত এশিয়া মহাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম এবং বাংলাদেশের শৈল্পিক গির্জাগুলোর অন্যতম অক্সফোর্ড মিশন গির্জা। বরিশালের অন্যতম কৃতি সন্তান চারন কবি মুকুন্দ দাস। ব্রিটিশবিরোধী জাগানিয়া এমন সব গণসঙ্গীত আজও প্রাণ ছুঁয়ে যায় মুক্তচিন্তার মানুষের। বিভিন্নভাবে প্রাপ্ত অর্থ দিয়ে তিনি বরিশালের কাশীপুর কালী মন্দিরের জায়গা কেনেন। এখন বরিশালে চারনকবি মুকুন্দ দাসের কালীবাড়ি নামে পরিচিত। এখানে রয়েছে ছাত্রাবাস, লাইব্রেরি, দাতব্য চিকিৎসালয় এবং পূজামন্দির। মুকুন্দ দাসের স্মৃতিরক্ষায় এখন ঐটুকুই বরিশালে সবেধন নীলমনি হয়ে আছে। বরিশাল শহর থেকে আট কিলোমিটার উত্তরে লাকুটিয়া জমিদার বাড়ির অবস্থান। প্রায় চারশ’ বছর আগে রাজা রায়চন্দ্র রায় নির্মিত এ বাড়িটি বরিশাল বিভাগের মধ্যে অন্যতম পুরনো জমিদার বাড়ি। রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে এটি এখন পরিত্যক্ত ভূতুড়ে বাড়িতে পরিনত হয়েছে। লাকুটিয়া জমিদারদের সব থেকে সুন্দর স্থাপনা হলো মন্দিরগুলো। এগুলোর বেশির ভাগই আটচালা দেউলরীতিতে তৈরি। শিখররীতির মন্দিরও। বাড়ির কাছেই আমবাগান। বাগানটি গড়ে উঠেছে বিশাল এক দীঘির পাড়ে। একে সবাই রাণীর দীঘি বলে। আধুনিক বরিশালের রূপকার মহাত্মা অশ্বিনীকুমার দত্ত ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনের অন্যতম বিপ্লবী। তিনি আমৃত্যু রাজনীতির সাথে যুক্ত থেকে বরিশালবাসীর জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে কাজ করেছেন। ১৮৫৩ সালে বরিশাল জিলা স্কুল প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ অঞ্চলে আধুনিক শিক্ষার ক্ষেত্রে যে নবজাগরণ শুরু হয় তারই ধারাবাহিকতায় বরিশালের তৎকালীন জেলা ম্যাজিস্ট্রেট বাবু রমেশচন্দ্র দত্তের অনুরোধে অশ্বিনী কুমার দত্ত তাঁর বাবা ব্রজমোহন দত্তের নামে সত্য, প্রেম, পবিত্রতার মহান আদর্শে ১৮৮৪ সালে প্রতিষ্ঠিত বি এম স্কুল ক্যাম্পাসে ব্রজমোহন কলেজ স্থাপন করেন। ব্রজমোহন কলেজ ছিল বৃহত্তর বরিশালের বঙ্গভঙ্গ, অসহযোগ ও স্বাধীনতা আন্দোলনের মূল কেন্দ্র। বরিশাল মহাশ্মশান ১০০০ বছর ব্যাপী নানা ঘটনার ও স্মৃতির স্বাক্ষী হয়ে আছে। এখানে সবচেয়ে প্রাচীন সমাধি ফলকটি ইংরাজি ১৩২৫ সালের! এর আগে বহু প্রাচীণ সমাধি ধ্বংস হয়েছে এবং বহু সমাধি সাল তারিখ বিহীন পড়ে থাকায় এর ইতিহাস পাওয়া যায়নি। সংগ্রামী বহু মানুষের শেষ আশ্রয় এই মহাশ্মশান। বহু সমাধির উত্তর প্রজন্ম আজ আর নেই। বরিশাল মহাশ্মশানে পাকা সমাধি রয়েছে প্রায় ৩ হাজার। এর মধ্যে ৫০০এর বেশী সমাধি রয়েছে যাদের কোন স্বজন নেই। প্রতিবছর ভূতচতুর্দশীর পূণ্য তিথিতে প্রিয়জনের স্মৃতির উদ্দেশ্যে তাদের সমাধিতে শুধু মাত্র দীপ জ্বালানোই হয় না, প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে খাবার-দাবারও দেয়া হয়ে থাকে। সেই সাথে ধূপকাঠি জ্বেলে দেয়া হয়। কেউ কেউ ধর্মীয় গান ও খোল বাদ্য সহকারে কীর্তণ করেন প্রিয়জনের আত্মার সন্তুষ্টির জন্য। প্রতিবছর শশ্মান দীপাবলি উৎসবে, সমাধি সৌধে দীপ জ্বেলে দেবার পর আলোর রশ্মিতে ভরে ওঠে মহাশ্মশান। এই উৎসব দেখতে দেশ-বিদেশ থেকে বহু পর্যটক এ সময় বরিশালে আসেন। বর্তমানে বরিশাল মহাশ্মশানের নাম করণ করা হয়েছে বিপ্লবী দেবেন্দ্রনাথ ঘোষের নাম অনুসারে।

এখানকার কিছু বিখ্যাত খাবার হল কাচ্চি বিরিয়ানী,  ফিরনী, গৌরনদীর দই, রসমালাই, ছানার সন্দেশ।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

2 Comments

  1. Anonymous

    বরিশালের তথ‍্য জেনে ভাল লাগলো এর সাথে বরিশালের সিদ্ধকাঠি গ্রাম সম্মন্ধে জানতে পারলে আরো ভাল লাগবে

  2. Anonymous

    বরিশালের কাহিনীর সঙ্গে অবশ্যই ঝালকাঠির বর্ননার প্রয়োজন ছিল….

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.