ভাষার বৈচিত্র্য নোয়াখালী

Share

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp

[fblike]

মেঘনার অববাহিকায় বঙ্গোপসাগরের কোল ঘেষে জন্ম নেওয়া নোয়াখালী। মুখে মুখে একটি গল্প ও কথা প্রচলিত আছে যে, নোয়াখালীর মানুষ আফ্রিকার জঙ্গলেও পাওয়া যায়। গাঙ্গেয় পলিমাটি সমৃদ্ধ উপকূলীয় জেলা নোয়াখালী। এ উর্বর অঞ্চল এক সময় সমতট নামে সুপরিচিত ছিলো। হাজার বছর ধরে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের সাথে যোগাযোগের কারণে ধীরে ধীরে সমৃদ্ধ হয়ে উঠেছিলো এ অঞ্চল। ভুলুয়া বন্দরের খ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বময়।বিক্ষুব্ধ সাগর ডিঙ্গিয়ে এদেশের মানুষ পাড়ি দিয়েছিলো দেশ বিদেশে। নোয়াখালী জেলার প্রাচীন নাম ছিল ভুলুয়া। নোয়াখালী সদর থানার আদি নাম সুধারাম। ইতিহাসবিদদের মতে একবার ত্রিপুরা-র পাহাড় থেকে প্রবাহিত ডাকাতিয়া নদীর পানিতে ভুলুয়া-র উত্তর-পূর্বাঞ্চল ভয়াবহভাবে প্লাবিত হয় ও ফসলি জমির ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। এই অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় হিসাবে ১৬৬০ সালে একটি বিশাল খাল খনন করা হয়, যা পানির প্রবাহকে ডাকাতিয়া নদী হতে রামগঞ্জ, সোনাইমুড়ী ও চৌমুহনী হয়ে মেঘনা এবং ফেনী নদীর দিকে প্রবাহিত করে। এই বিশাল নতুন খালকে নোয়াখালীর আঞ্চলিক ভাষায় “নোয়া (নতুন) খাল” বলা হত, এর ফলে অঞ্চলটি একসময়ে লোকের মুখেমুখে পরিবর্তিত হয়ে “নোয়াখালী” হিসাবে পরিচিতি লাভ করতে শুরু করে। নোয়াখালী জেলার মর্যাদা পায় ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানী কর্তৃক। ১৭৯২ সালে ত্রিপুরা নামে একটি নতুন জেলা সৃষ্টি করে ভুলুয়াকে এর অন্তর্ভূক্ত করা হয়। তৎকালে শাহবাজপুর, হাতিয়া, নোয়াখালীর মূল ভূখন্ড, লক্ষ্মীপুর ,ফেনী , ত্রিপুরার কিছু অংশ, চট্টগ্রামের সন্দ্বীপ ও মীরসরাই নিয়ে ছিল ভুলুয়া পরগনা। ১৮২১ সালে ভুলুয়া নামে স্বতন্ত্র জেলা প্রতিষ্ঠার পূর্ব পর্যন্ত এ অঞ্চল ত্রিপুরা জেলার অন্তর্ভূক্ত ছিল। ১৮৬৮ সালে ভুলুয়া জেলাকে নোয়াখালী জেলা নামকরণ করা হয়।

নোয়াখালীর ভাষার মধ্যে রয়েছে অন্য এক মাদকতা। এ অঞ্চলের বিভিন্ন এলাকার ভাষার মধ্যেও রয়েছে নানান বৈচিত্র্য। নানান কথায় নানান রসিকতায় এ ভাষা প্রাঞ্জল হয়ে ওঠে। যে কোনো উৎসব পার্বণে এ ভাষাতে চলে নানান রসিকতার আয়োজন। এ অঞ্চলের ভাষার সঙ্গে মিশে গেছে গ্রিক, ইংরেজি, ল্যাটিন, পর্তুগিজসহ নানান ইউরোপীয় ভাষা। সেই সাথে আরবি ফারসি তো রয়েছেই। ফলে নানান ভাষার মিশেল এক অনন্য বৈশিষ্ট্যের রূপ নিয়েছে নোয়াখালীর ভাষায়। প্রায় এক কোটি মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। বৃহত্তর নোয়াখালী ছাড়াও কুমিল্লা, লাকসাম, চৌদ্দগ্রাম, চাঁদপুরের কিছু এলাকা, ভোলা, চট্টগ্রামের মিরসরাই সীতাকুন্ড ও সন্দ্বীপের মানুষ এ ভাষাটিকেই ব্যবহার করছে। নবাবী ইতিহাস থেকে জানা যায় নোয়াখালী জেলার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বর্তমান সিরাজপুর ইউনিয়নের যুগিদিয়ায় সুলতানী আমলে সমুদ্র বন্দর ছিল।একই স্থানে পরে নবাবদের আমলে ফরাসিদের কুঠি ছিল । এছাড়াও কবিরহাট উপজেলায় বাংলার প্রথম স্বাধীন সুলতান ফখরুদ্দিন মুবারক শাহ জন্ম গ্রহণ করেছেন বলে জনশ্রুতি রয়েছে। নোয়াখালীর ইতিহাসের অন্যতম ঘটনা ১৮৩০ সালে নোয়াখালীর জনগণের জিহাদ আন্দোলনে সক্রিয় অংশগ্রহণ ও ১৯২০ সালের খিলাফত আন্দোলন। ১৯৪৬- এরশেষভাগে সারা ভারতবর্ষের সাম্প্রদায়িকতার বিষবাষ্প ছড়িয়ে পড়ে। তখনপশ্চিমবঙ্গের সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার প্রভাব এসে পড়ল নোয়াখালীতে। বিশেষ করে লক্ষ্মীপুর জেলার রামগঞ্জ থানায় সাম্প্রদায়িকতার তান্ডবলীলা দেখা দেয়। মশালের আগুনে পুড়ে যায় বহু সাজানো সংসার, সবুজ মাটি লাল হয়ে যায় সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার রক্তের প্লাবনে। শান্তি মিশনের অগ্রদূত হয়ে নোয়াখালীতে ছুটে আসেন অসহযোগ ও অহিংস আন্দোলনের পুরোধা মহাত্মা গান্ধী। ১৯৭১-এর স্বাধীনতা সংগ্রামে পাক হানাদার বাহিনীর সাথে বহু রক্তক্ষয়ী যুদ্ধে নোয়াখালীর মাটি রঞ্জিত হয়ে আছে। ১৫ই জুন, ১৯৭১ সালে সোনাপুর আহমদীয়া স্কুলের সম্মুখ যুদ্ধে প্রায় ৭০ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হয়। ১৯৭১ সালের ১৯ আগস্ট পাকবাহিনী বেগমগঞ্জ থানার গোপালপুরে গণহত্যা চালায়। নিহত হন প্রায় ৫০ জন নিরস্ত্র মানুষ। নোয়াখালী জেলা স্বাধীন হয় ১৯৭১ সালের ৭ ডিসেম্বর।

নিঝুম দ্বীপ নোয়াখালী তথা বাংলাদেশের অন্যতম একটি পর্যটন কেন্দ্র। নোয়াখালী জেলার দক্ষিণে মেঘনা নদীর মোহনায় অবস্থিত হাতিয়া উপজেলার সর্বদক্ষিণে নিঝুমদ্বীপের অবস্থান। চারটি প্রধান দ্বীপ ও কয়েকটি চরের সমষ্টি নিঝুম দ্বীপ। কেওড়ার বন আছে এখানে, বনে হরিণ আছে অনেক। শীতকালে এখানে হাজার হাজার অতিথি পাখির সমাবেশ ঘটে। মুছাপুর সি-বিচ কোম্পানিগঞ্জ উপজেলার মুছাপুর গ্রামে ছোট ফেনী নদীর পাশে অবস্থিত। কমলা দিঘী নোয়াখালী জেলার বেগমগঞ্জ উপজেলার বেগমগঞ্জ ইউনিয়নে অবস্থিত। এ দিঘী নিয়ে অনেক পুরানা কাহিনী এ এলাকায় প্রচলিত রয়েছে। দিঘীর আকার ও বিশালত্ব একে অন্যরকম মর্যাদা দিয়েছে। ৩০০ বছরের মোগল স্থাপত্যের ঐতিহাসিক নিদর্শন ‘বজরা শাহি মসজিদ’। ১৭৪১ সালে মোগল সম্রাট মুহাম্মদ শাহর রাজত্বকালে তাঁর নির্দেশে ও অর্থে মিয়া আম্বরের সহযোগিতায় জমিদার আমান উল্যাহ খান দিল্লির শাহি মসজিদের অনুকরণে এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। জমিদার আমান উল্যাহ্ তাঁর বাড়ীর সামনে ৩০ একর জমির উপর উঁচু পাড় যুক্ত একটি বিশাল দীঘি খনন করেন। নোয়াখালী জেলার প্রথম ব্যারিস্টার জয়াগ গ্রামের কৃতী সন্তান হেমন্ত কুমার ঘোষ তাঁর জমিদারির স্থাবর- অস্থাবর সম্পত্তি জনকল্যাণ খাতে ব্যয়ের উদ্দেশ্যে মহাত্মা গান্ধীর নামে উৎসর্গ করেন। বর্তমানে সোনাইমুড়ি উপজেলার জয়াগ নামক স্থানে গান্ধীজির নামে একটি আশ্রম রয়েছে, যা “গান্ধী আশ্রম” নামে পরিচিত।

এ জেলার পিঠাগুলো সারাদেশে বিখ্যাত। চিতই পিঠা,ভাপা পিঠা, চিরকুটি পিঠা,পঁচা/জালা পিঠা, পাক্কন পিঠা, পুলি পিঠা, বাতাসি পিঠা, নকশী পিঠা বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য। জেলার মোষের দই, নারকেল নাড়ু, ম্যাড়া পিঠা সারাদেশে প্রসিদ্ধ। প্রচীন কাল থেকে এই এলাকায় সুপারী ও নারকেল গাছের আধিক্য দেখা যায়। সমগ্র নোয়াখালী জেলা নারকেল সুপারির জন্য দেশব্যাপী বিখ্যাত।

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.