সমালোচনা-ছেঁড়া কাঁথা-বিতর্ক সরিয়ে রেখে ফাওলারকে তিন পয়েন্ট উপহার দিল দল

Share

Share on facebook
Facebook
Share on twitter
Twitter
Share on whatsapp
WhatsApp

[fblike]

February 7, 2021
1 - 2
Full Time

ছেঁড়া কাঁথায় শুয়ে লাখ টাকার স্বপ্ন দেখা যায় কিনা সেটা যে সাংবাদিকের উর্বর মস্তিষ্ক থেকে এধরনের হেডলাইন বেরোয় তিনিই সবচেয়ে ভালো বলতে পারবেন। তবে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে বিশেষ করে যখন টুর্নামেন্টে অঙ্কের বিচারে খুবই ক্ষীণ আশা অবশিষ্ট ঠিক তখনই তুমুল আধিপত‍্যে তিন পয়েন্ট তুলে সপাটে সমালোচকদের নাক পেঁচিয়ে ঘুষি মেরে থেবড়ে দেওয়ার ক্ষমতা রবার্ট বানার্ড ফাওলারের ছেলেদের আছে। এই ঘুষি মারার কাজটাই টানা নব্বই মিনিট ধরে করে গেলেন সৌরভ-স্টেইনম‍্যান-ব্রাইট-সার্থকরা।

হ‍্যাঁ, প্রথমবার ফাওলারের টিমের হয়ে মাঠে নেমেই সার্থক গলুই ও সৌরভ দাস প্রমাণ করে দিয়ে গেলেন শুধু ম‍্যাচ রিডিং নয়, হাতে কি মাল-মশলা আছে তার ওপরেও কোচেদের সাফল‍্য অনেকটাই নির্ভর করে। কেরিয়ারের সেরা সময়ের মেহতাব হুসেনের যে অভাব শেষ বেশ কয়েক বছরে মেহতাব হুসেন নিজেও পূরন করতে পারেননি সেই অভাব মেটার ক্ষীণ আভাস দিয়ে গেলেন সৌরভ দাস। ঠান্ডা মাথায় একের পর এক জামশেদপুরের আক্রমন মাঝমাঠেই থামালেন সাথে পাল্লা দিয়ে বল বাড়ালেন আক্রমনে। সৌরভ-মাঘোমা যুগলবন্দী টপকাতেই একটা সময় ওয়েন কয়েলের টিমকে সেট পিসের মুখাপেক্ষী হয়ে মুনরো কে নামাতে হলো। ডিফেন্সে সার্থক গলুইয়ের অন্তর্ভুক্তি ও রাজু গায়কোয়াড়ের ফিরে আসায় থেমে গেলো ভালসকিস, ফারুখদের জারিজুরি।

ম‍্যাচ শুরুর বাঁশি বাজতেই বিএফসি ম‍্যাচের মতোই প্রচন্ড দ্রুত গতিতে নিজেদের মধ‍্যে পাস খেলতে খেলতে জামশেদপুরের ডিফেন্সে হানা দিতে শুরু করে রবার্ট ফাওলারের ছেলেরা। মোট ছয়টি পজিশনের খেলোয়াড় পরিবর্তন করে খেলতে নামলেও দলের খেলায় কোন রকম জড়তা দেখা তো যায়ইনি বরং ডিফেন্সে ফর্মে থাকা স্কট নেভিল ও রানার বদলে আসা রাজু গায়কোয়াড় ও সার্থক গলুই অধিনায়ক ড‍্যানি ফক্সের সাথে যোগ‍্য সঙ্গত করে অভিজ্ঞ সুব্রত পালের সামনে রীতিমতো দুর্গ গড়ে তোলে।

এই আক্রমনাত্মক খেলার ফলস্বরূপই ম‍্যাচের পাঁচ মিনিটের মাথায় নারায়ন দাসের পিলকিংটনের উদ্দেশ্যে বাড়ানো ডিফেন্সভাঙা ক্রস শেষ মূহুর্তে কর্নারের বিনিময়ে ক্লিয়ার করেন জামশেদপুর ডিফেন্সের স্তম্ভ এজে। নারায়ন দাসের তোলা এই কর্নার থেকেই ম‍্যাচের ছয় মিনিটের মাথায় অসাধারণ হেডে গোল করে যান ইষ্টবেঙ্গল মিডিও মাত্তি স্টেইনম‍্যান। দাঁড়িয়ে থেকে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিলো না রেহনেশ সহ গোটা জামশেদপুর ডিফেন্সের। ভালসকিস, ফারুখ, অ্যালেক্স, ডঙ্গেলরা হাইপ্রেস করেও ইষ্টবেঙ্গল ডিফেন্স সেভাবে ভাঙতে পারেননি। ভালসকিসের একক প্রচেষ্টায় নেওয়া শট পোস্টের নীচের অংশে লেগে ফেরা ছাড়া আর বিশেষ কোন বিপদজনক মূহুর্ত তৈরী করতে পারেননি কয়েলের আক্রমনভাগের খেলোয়াড়েরা।

দ্বিতীয়ার্ধে জামশেদপুর বেশ কিছু খেলোয়াড় পরিবর্তন করেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেনি। তবে বল নিজেদের দখলে রেখে ইষ্টবেঙ্গল ডিফেন্সের ওপর ক্রমাগতঃ চাপ তৈরীর চেষ্টা চালাতেই থাকে তারা। বক্সের আশেপাশে পাওয়া ফ্রিকিক ও কর্নার গুলোকে কাজে লাগাতে এই সময় মুনরো কে নিয়ে আসেন জামশেদপুর কোচ কয়েল। এই সময়টায় ইষ্টবেঙ্গল পাল্টা লংবল স্ট্র‍্যাটেজি তে চলে যায়। ডিফেন্স থেকে ফক্স ও সার্থক লম্বা লম্বা বল তুলতে থাকেন পিলকিংটন ও ব্রাইটকে লক্ষ‍্য করে। ব্রাইটকে আটকাতে রীতিমতো হিমশিম খেয়ে যান জামশেদপুর ডিফেন্সের হার্টলে, এজে-রা। বেশ কিছু কড়া ট‍্যাকল করেও ব্রাইটকে আটকানো সম্ভব হয়নি। নিজের ছন্দেই প্রতিপক্ষ ডিফেন্ডারদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে থাকেন ব্রাইট এনোবাখারে। বেশ কিছু ঠিকানা লেখা পাস বাড়ালেও সেগুলি থেকে দুর্ভাগ‍্যবশতঃ দলের গোলসংখ‍্যা বাড়েনি।

ম‍্যাচের সাতষট্টি মিনিটের মাথায় সৌরভ দাস প্রতিপক্ষের পা থেকে বল কেড়ে নিয়ে মাঝমাঠে মাত্তিকে বাড়িয়ে দেন। মাত্তি তার সামনে থাকা পিলকিংটনের উদ্দেশ‍্যে মাটিঘেঁষা পাস বাড়ালে পিলকিংটন বলটা ধরতেই বেআব্রু হয়ে যায় জামশেদপুরের ডিফেন্স। এজে শেষ একটা চেষ্টা চালালেও ততক্ষণে অনেকটাই দেরী হয়ে গেছে। পিলকিংটনের জোরালো মাপা শট রেহনেশকে মাটি ধরিয়ে জালে জড়িয়ে ইষ্টবেঙ্গলের জয় প্রায় সুনিশ্চিত হয়ে যায়। পিলকিংটনের এই গোল ফিরে আসার অভিযানে তার দল এবং তার নিজের জন‍্য ভীষন ভীষন প্রয়োজনীয় হয়ে পড়েছিলো। আমাদির পরিবর্ত হিসাবে উঠে যাওয়ার আগে ব্রাইটের পাস পিলকিংটনের পা হয়ে বারপোস্টে লেগে না ফিরলে গোলসংখ‍্যা আরো বাড়তো। আমাদি এসে জামশেদপুরের ডিফেন্সে চাপ আরো বাড়ালেও গোলের রাস্তা খুলতে পারেননি আজও।

নব্বই মিনিট সম্পূর্ন হবার ঠিক সাত মিনিট আগে জামশেদপুর এফসির কর্নার ইষ্টবেঙ্গল ডিফেন্সে প্রতিহত হয়ে বক্সের ডান প্রান্তে চলে গেলে, সেখান থেকে ভাসানো বলে মাথা ছুঁইয়ে গোল শোধ করে দিয়ে যান হার্টলে। এরপর স্কোর সমান সমান করে হারা ম‍্যাচ থেকে এক পয়েন্ট তোলার বহু চেষ্টা করেও বিশেষ সুবিধা করে উঠতে পারেনি কয়েলের জামশেদপুর এফসি। গোটা ম‍্যাচে এসসি ইষ্টবেঙ্গলের অঙ্কিত মুখার্জির হঠাৎ হঠাৎ ম‍্যাচ থেকে হারিয়ে জায়গা ছেড়ে দেওয়া আর নারায়ন দাসের আচমকা মিসপাস ছাড়া তেমন দুশ্চিন্তার কিছু দেখা যায়নি। ব্রাইট যদি নিজের সোলো রান গুলোকে জালে জড়াতে পারে তবে এই দল শেষ কয়েক ম‍্যাচে পয়েন্ট টেবিলে বিস্তর ওলট পালটের ক্ষমতা রাখে‌।

ঠিকঠাক পজিশনে ঠিকঠাক খেলোয়াড় থাকলে রবার্ট বার্নাড ফাওলার গ‍্যালারীতে বসেও ফুল ফোটাতে পারেন সেটা দেখিয়ে দিয়ে গেলো এই ম‍্যাচ। ম‍্যাচ রিডিং, খেলোয়াড় পরিবর্তন, স্ট্র‍্যাটেজি এগুলো তখনই সফল হয় যখন কোচের পরিকল্পনাকে মাঠে নব্বই মিনিটে বাস্তবে রূপ দেওয়ার মতো খেলোয়াড় থাকে। নয়তো ম‍্যাচ রিডিং, স্ট্র‍্যাটেজি, খেলোয়াড় পরিবর্তন সবকিছুতে তুখোড় হয়েও ম‍্যাচ হেরে বা একপয়েন্ট পেয়ে সন্তুষ্ট থাকতে হয়। এই দলে সবচে গুরুত্বপূর্ণ পজিশনে মিলন সিং, অজয় ছেত্রীরা এতোদিন মিসপাসের ফোয়ারা ছোটাতেন, সেখানে সৌরভ দাস প্রথম দিন খেলতে নেমে দেখিয়ে দিলেন একজন ডিফেন্সিভ মিডিওর কাজটা ঠিক কি হওয়া উচিত। একটাও বাজে ফাউল বা মিসপাস না করেও আক্রমন ও রক্ষনের মধ‍্যে সামঞ্জস্য তৈরী করা যায়। মূলতঃ সৌরভের জন‍্যই স্টেইনম‍্যান অনেকটা ওপরে উঠে ফ্রি ফ্লোয়িং ফুটবলটা খেলতে পারলেন। এই দলের ইঞ্জিন যে স্টেইনম‍্যান সেটাও প্রমান দিয়ে গেলেন।

দেবজিতের জায়গায় খেলতে নামা সুব্রত পালের অভিজ্ঞতা দলের ডিফেন্সকে সঠিক শেপ ধরে রাখতে সাহায‍্য করলেও গোলের সময়টায় বাইরের দিকে ঝাঁপ দিলে ইষ্টবেঙ্গল জার্সীতে বহুবছর বাদে খেলতে নেমে প্রথম ম‍্যাচটা ক্লিনশিট রাখতেই পারতেন। তবে ফিস্ট করে একটা নিশ্চিত গোল বাঁচিয়ে তিন পয়েন্ট তোলায় সুব্রত পালের ভূমিকাও অস্বীকার করার মতো নয়‌।

অল্পবিস্তর ভুল ত্রুটি থাকলেও মরশুমের শুরু থেকে এই দলটাই একজন পজিটিভ স্ট্রাইকার নিয়ে শুরু করলে এবছরের আইএসেল পয়েন্ট টেবিল অন‍্যরকম হতেই পারতো। ইনভেস্টর শ্রীসিমেন্ট চুক্তি সংক্রান্ত জটিলতার সমাধান বার করে এই দল ধরে রেখে পরের মরশুমে স্বপ্নের ইষ্টবেঙ্গল টিম তৈরী করতে পারবে বলে আশাবাদী হওয়াই যায়। এই মরশুমে পরপর ব্রাইট, সৌরভ, সার্থকদের সাইন করানো থেকেই শ্রীসিমেন্টের আন্তরিকতা সম্পর্কে স্পষ্ট ধারনা পাওয়া যায়। ইষ্টবেঙ্গলের ঐতিহ‍্যে গৌরবান্বিত এক অধ‍্যায়ের অংশ হতেই পারেন শ্রীসিমেন্টের বাঙুরেরা।

Results

Club2nd HalfGoalsOutcome
Jamshedpur FC11Loss
SC East Bengal2Win

Details

Date Time League Season Full Time
February 7, 2021 5:00 pm Indian Super League 2020 90'

League Table

PosClubPWDLFAGDPts
1Hyderabad FC129122471728
2Mumbai City FC1183032112127
3ATK Mohun Bagan127231712523
4Kerala Blasters FC117131914522
5FC Goa126152016419
6Odisha FC116141515019
7Chennaiyin FC114252123-214
8East Bengal114071320-712
9Bengaluru FC12318817-910
10Jamshedpur FC11128819-115
11NorthEast United FC1210111033-233

One Comment

  1. Debanik Biswas

    Excellent read

Leave a Reply

This site uses Akismet to reduce spam. Learn how your comment data is processed.